সম্পাদকীয় ১...
অনিয়ম-শৃঙ্খল
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটির কিছু বিশেষ মাহাত্ম্য থাকিবার কথা। যিনি সেই পদে বৃত হইবেন, তাঁহার মধ্যে সারস্বত ও প্রশাসনিক গুণাবলির স্বীকৃত সমাহার থাকিবার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁহারা পড়াইয়া থাকেন, সেই অধ্যাপকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি সতর্কতা ও বিচক্ষণতা জরুরি হয়, উপাচার্য নিয়োগের কাজটি দ্বিগুণ সতর্কতা ও বিচক্ষণতা দাবি করে। অথচ, এই আপাত-সাধারণ কথাটি পশ্চিমবঙ্গে প্রায়শই খাটে না। এই রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে সরকারি দাক্ষিণ্যেরই নামান্তর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শৌভিক ভট্টাচার্যের পদত্যাগের পর ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হইলেন রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী। এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবিত, এবং রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের স্বাক্ষর দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ প্রাক্তন উপাচার্যের আকস্মিক পদত্যাগের ঘটনার অপেক্ষা অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলিবার মতো বিষয় পরবর্তী উপাচার্যের মনোনয়নের বিষয়টি। প্রশ্ন তিনটি। প্রথম প্রশ্ন, কেন শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করিবেন। দুই, কেন আচার্য-মহাশয় অন্যত্র-প্রচলিত প্রথাসকল অগ্রাহ্য করিয়া শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবেই স্বাক্ষর করিবেন। এবং তিন, কেন নূতন উপাচার্য শোভন-সীমা অতিক্রম করিয়া সেই পদ গ্রহণ করিবেন।
প্রশ্নটি উঠিতেছে, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান বা ডিন-দের মধ্য হইতেই অস্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইহা কোনও আইন নয়, কিন্তু প্রোটোকল, অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য শোভন প্রথা। একটি সরকারি প্রশাসনিক পদে আসীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত আপাতত অ-সংযুক্ত কোনও ব্যক্তিকে আচার্যের স্বাক্ষর-সংবলিত শিক্ষামন্ত্রীর ‘সার্টিফিকেট’ মোতাবেক এই পদের দায়িত্ব দেওয়া অসমীচীন। বিশেষত যাঁহারনাম পূর্বতন সার্চ কমিটি দ্বারা উপেক্ষিত হইয়াছিল, দ্বিতীয় বার তাঁহাকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য মনোনীত করিবার মধ্যে দুষ্ট লোকে নেপথ্যদ্বার দিয়া রাজনৈতিক কৃষ্ণহস্তের প্রসার দেখিবেই। দোষ দেওয়া যাইবে না।
প্রধান আপত্তি অবশ্যই রাজ্যপাল তথা আচার্যের সিদ্ধান্ত লইয়া। কেন তিনি শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবে অন্ধ সায় দিবেন? কেন স্ববিবেচনায় কাজ করিবেন না? বর্তমান আইন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে প্রস্তাব আসিতেই পারে। তাহার নৈতিক যাথার্থ্য লইয়া অবশ্যই প্রশ্ন ওঠে, আইন সংশোধন করিয়া রাজ্য সরকারের ভূমিকা সম্পূর্ণ বিলোপ করাই সংগত। কিন্তু তাহা পরের কথা। বর্তমান আইনেও রাজ্য সরকারের প্রস্তাব বা পরামর্শ শিরোধার্য করিবার কোনও বাধ্যতা আচার্যের নাই। আচার্য হিসাবে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁহার কার্যকর অধিকার আছে। অধিকার থাকিলেই দায়িত্ব থাকে, দায়বদ্ধতা থাকে। ঔচিত্যের প্রতি দায়বদ্ধ থাকিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা তাঁহার আছে। সেই স্বাধীনতা তিনি কাজে লাগাইবেন না কেন? রাজ্য সরকারের সহিত রাজ্যপালের সংঘাত প্রশমনই কি তাঁহার এ হেন ‘অনীহা’র কারণ? বহু উত্তাপ জমিয়াছে, সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অপসারণ লইয়াও জটিলতার ঘূর্ণিপাক তৈরি হইয়াছে। সেই সকল প্রেক্ষিত মনে রাখিয়াই হয়তো এই স্বাধীনতার সুচিন্তিত অ-ব্যবহার। কারণ যাহাই হউক, যাহা থাকিয়া গেল, তাহা একটি অতীব কু-দৃষ্টান্ত। আইন সংশোধন পরের কথা। যে সকল নিয়ম-নীতি-প্রথা বর্তমান, সেগুলি মানিয়া চলিলেই রাজ্যের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলি অনেক ‘সংস্কৃত’ হইতে পারে। অনেক নিরপেক্ষ ও দক্ষ হইতে পারে। রাজ্যের সর্বমুখ্য পদাধিকারীই যদি সে বিষয়ে অনবধান দেখান, তবে আর যদু-মধুকে দোষ দিয়া কী লাভ!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.