আইপ্যাড এখন আরও তন্বী!
নামেই বলা আছে গুণ। ‘আইপ্যাড এয়ার’। অ্যাপল কর্তাদের দাবি, তাঁদের পরিবারের এই নবীনতম সদস্যটি পুরনো সব ট্যাবলেটের থেকে অনেক হাল্কা এবং পাতলা। অর্থাৎ হাতে ধরে কাজ করাটা অনেক বেশি আরামের। সঙ্গে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ছোটখাটো কিছু বদলের ছোঁয়া তো রয়েইছে।
‘এয়ার’-এ ভর করে তাই বড়দিনের বাজার মাতাতে কোমর বেঁধেছে টিম কুকের দল। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, নভেম্বর থেকেই ১৬ জিবি-র ‘আইপ্যাড এয়ার’ বিকোবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনে। আগের আইপ্যাডের থেকে ২০% সরু গড়নের নয়া মডেলের ওজন এক পাউন্ড। ৯.৭ ইঞ্চি স্ক্রিনে থাকছে আধুনিক মানের রেটিনা ডিসপ্লে। এই আইপ্যাড এয়ারে কাজ করা যাবে পুরনো আইপ্যাডের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে। গ্রাফিক্সের কাজও ৭২% জলদি হবে। সঙ্গে ৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, ডুয়াল মাইক্রোফোন। মার্কিন ক্রেতাদের জন্য নতুন আইপ্যাডের দাম ৪৯৯ ডলার থেকে শুরু। ব্রিটেনে শুরু ৩৯৯ পাউন্ড থেকে।
মঙ্গলবার সান ফ্রান্সিসকোর অনুষ্ঠানে ‘এয়ার’ ছাড়াও আরও কিছু নয়া অবদানের কথা ঘোষণা করেছে অ্যাপল। যেমন রেটিনা ডিসপ্লে-সহ আইপ্যাড মিনি, আরও শক্তিশালী বেলনাকার কম্পিউটার ‘ম্যাক প্রো’, এমনকী অপারেটিং সিস্টেম বিনামূল্যে আপডেটের সুবিধে পর্যন্ত। কিন্তু অ্যাপল সিইও ঘুরেফিরে এলেন সেই ট্যাবলেট তথা ‘আইপ্যাড এয়ার’ প্রসঙ্গেই। কতকটা নজিরবিহীন ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলোকে (পড়ুন স্যামসাং, গুগল ও মাইক্রোসফট) আক্রমণ করে বললেন, “ওরা শুধু ট্যাবলেটকে পিসি, আর পিসি-কে ট্যাবলেট বানিয়ে চলেছে। আমাদের কাছে আমাদের লক্ষ্যটা স্পষ্ট।” |
কোন দিন এমন কথা বললেন কুক? যে দিন কয়েক ঘণ্টা আগেই তুলনায় কম ঢাকঢোল পিটিয়ে হলেও ট্যাবলেটের বাজারে ঢুকে পড়ল নোকিয়া। উইন্ডোজ-চালিত তাদের ‘লুমিয়া ২৫২০’ ট্যাবলেট আত্মপ্রকাশ করল মঙ্গলবারেই। এবং আমেরিকায় তার দামটাও ওই ৪৯৯ ডলার থেকেই শুরু। একই দিনে বাজারে এল মাইক্রোসফটের ‘সারফেস-২’ ট্যাবলেট। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, নোকিয়া-কে সম্প্রতি কিনে নিয়েছে মাইক্রোসফট। অতএব একই শিবির থেকে জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে স্টিভ জোবসের মানসপুত্র।
জোবসের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। ক্রেতা কী চাইছেন, সেটা জেনে নিয়ে যন্ত্র বানাতে বসলে চলবে না। বরং আগেভাগেই এমন যন্ত্র বানিয়ে ফেলতে হবে, যেটা পেয়ে ক্রেতা বলবেন, “এটাই তো চাইছিলাম!” বাজার ধরার জন্য নতুন যন্ত্রের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করার দরকার হয়নি তাঁর। কাজেই মঙ্গলবারের অ্যাপল-আসরে কুক কেন সেই পথে হাঁটতে গেলেন, প্রশ্ন থাকছে। না হলে কেন তিনি বলবেন, “আজকাল তো মনে হয় সবাই ট্যাবলেট বানাচ্ছে। কিন্তু সে সমস্ত ট্যাবলেটের মোট সংখ্যার থেকে চার গুণেরও বেশি ব্যবহার হচ্ছে আইপ্যাড।”
ঘটনা হল, প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ নিয়ে যে স্যামসাংয়ের সঙ্গে অ্যাপলের মামলা-মোকদ্দমা লেগেই থাকে, সেই তাদেরই ‘গ্যালাক্সি ট্যাব’-এর রমরমা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কলকাতার বাসিন্দারা তো তুলনায় অনেক কম দামের ‘মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস’, এইচসিএল কি ভিডিওকনের ট্যাবও দেদার কিনছেন। এসেছে প্রচুর চিনা ট্যাবলেট। বিএসএনএল পর্যন্ত সস্তার ট্যাব বিক্রি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুনিয়া জুড়েই ট্যাবলেটের জগতে এই বিপ্লবটা অ্যাপল কর্তাদের চোখ এড়ায়নি। যদিও তাঁদের উদ্বেগ স্যামসাং-গুগলের মতো প্রথম সারির সংস্থাগুলোকে নিয়েই।
তবে অ্যাপল এ-ও জানে, তাদের সব চেয়ে বড় শক্তি তাদের একনিষ্ঠ ভক্তরা। যাঁরা অ্যাপল-নির্মিত যাবতীয় যন্ত্র কিনতেই ফুটপাথে রাতভর লাইন লাগান। এঁরা দামের পরোয়া করেন না। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, আঙুলের ছাপ চেনার প্রযুক্তি-সহ আইফোন ৫এস-এর বিক্রি যথেষ্ট ভাল। দামটা বেশি হওয়া সত্ত্বেও। বরং তুলনায় কমদামি আইফোন ৫সি-র বাজার ততটা ভাল নয়। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, এটাই অ্যাপল-ম্যাজিক। যাঁরা আইফোনকে চাইবেন, সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী হিসেবেই চাইবেন। আমজনতার দামের নাগালে নেমে আসার জন্য গুণমানে আপোসকে অ্যাপল-ভক্তরাই উৎসাহ দেবেন না।
কিন্তু জোবস-উত্তর যুগে সম্পূর্ণ আনকোরা একটা যন্ত্র আর অ্যাপল বাজারে আনল কই? আইপড, আইফোন, আইপ্যাড ছিল স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মাইলস্টোন। এক-একটা বিপ্লব। কিন্তু তার পর? বহুচর্চিত অ্যাপল-টিভি বা অ্যাপল-ওয়াচের খবর কী?
কুক ভেঙে বলেননি। বলেছেন, “আমরা লক্ষ্যের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছি।” আপাতত তাই স্পটলাইটের আলোয় পুরনো বিস্ময়েরই নয়া অবতার ‘আইপ্যাড এয়ার’। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, দামের দিক থেকে তন্বী না হয়ে উঠতে পারলে যথেষ্ট সহজ হবে না আইপ্যাডের এই বাজার আঁকড়ে রাখার লড়াই। |