নাসিকের ট্রাক ঢুকছে না কলকাতায়। ভরসা বলতে বেঙ্গালুরু। তা-ও চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
পরিণাম? বুধবার এ শহরের খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম পৌঁছল ৮০ টাকায়। পোস্তা কিংবা কোলে মার্কেটের পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় ঘোরাফেরা করেছে।
পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, এ অবশ্য নেহাতই কলির সন্ধে! বেঙ্গালুরুর পেঁয়াজ সড়ক পথে তিন-চার দিনে কলকাতা পৌঁছয়। তাই এখানে এখনও ক’দিনের পুরনো দর মিলছে। মানিকতলা বাজারের এক পেঁয়াজবিক্রেতাও বললেন, “৮০ টাকা কেজির যে পেঁয়াজ বিক্রি করছি, তা আগের মজুত করা। নতুন পেঁয়াজ এখনও পোস্তা বা কোলে মার্কেট থেকে তুলিনি। সেটা তুললে দাম আরও বাড়বে।”
বাজারের যা হাল, তাতে আপাতত এ রাজ্যে পেঁয়াজজনিত পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ারই সম্ভাবনা। পোস্তা বাজারের অনিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি বিক্রম যাদব বলছেন, “নাসিকের পেঁয়াজ মিলতে কালীপুজো-ভাইফোঁটা পার হয়ে যাবে। অগত্যা ভরসা বেঙ্গালুরুর পেঁয়াজই। তাই দাম কমা অসম্ভব। বরং দিল্লি-বেঙ্গালুরুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা আরও বাড়তে পারে।” দিল্লির কয়েকটি এলাকায় পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। দিল্লি বা বেঙ্গালুরুতে খুচরো বাজারের দর গড়ে ৯০ টাকা।
লোকসভা ভোটের আগের দিওয়ালিতে এই পেঁয়াজ-সঙ্কটে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যত ত্রাহি-মধুসূদন অবস্থা। পড়শি পাকিস্তান থেকে শুরু করে চিন-ইরান-মিশর থেকেও পেঁয়াজ আনার লক্ষ্যে আমদানির শর্ত শিথিল করার তোড়জোড় চলছে। কৃষি মন্ত্রকের খবর, চিন এবং মিশরে ব্যাপক পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ওই সব দেশে পেঁয়াজ এ দেশের থেকে সস্তা। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, তা নিয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। দেশ জুড়ে অতিবৃষ্টির ফলে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে প্রচুর। এখন পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে, তা কার্যত মেনে নিয়েই মন্ত্রী বলেন, “আমি জ্যোতিষী নই। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে আমার মনে হয়, আগামী দু’-তিন সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
খাদ্যমন্ত্রী কে ভি থমাস বেগতিক দেখে মহারাষ্ট্রে ছুটেছেন। যা পরিস্থিতি, দেশের ২৮ শতাংশ পেঁয়াজের ভাঁড়ারের অবস্থা সরেজমিনে দেখে আসাই শ্রেয় মনে করেছেন তিনি। কালোবাজারি রুখতে বিভিন্ন রাজ্যকে কড়া হাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র।
পোস্তার অনিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার বাজারগুলোতে সরবরাহের জন্য প্রতি দিন ৮০ ট্রাক মতো পেঁয়াজ লাগে। এক-একটি ট্রাকে ১৬ টন পেঁয়াজ থাকে। এখন মেরেকেটে দিনে ৮-১০টা ট্রাক ঢুকছে। ফলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। খুচরো বাজারেও দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
একই হাল কোলে মার্কেটেও। কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখানে বুধবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মতো ছিল। এই দাম এখনই কমার সম্ভাবনা নেই। বেঙ্গালুরুর পেঁয়াজে চাহিদা মিটছে না। নাসিক থেকে নতুন পেঁয়াজের আশায় বসে রয়েছি।” তবে কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য ফাটকা বাজারকেও আংশিক দায়ী করছেন। তাদের দাবি, শুধু ভিন রাজ্য থেকে পেঁয়াজ না আসাকেই দায়ী করলে হবে না। বড়বাজারে গঙ্গার
ধারে কিছু পেঁয়াজের গোডাউন আছে। সেখানে পেঁয়াজ মজুত করা হচ্ছে বলে কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাংশের মত। কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য কেন্দ্রকেই দুষছেন। “ডিভিসি জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। তার উপরে ডিজেলের দাম বাড়ায় সব্জি আনা-নেওয়ার খরচ বেড়েছে।” বেশি মুনাফার লোভে পেঁয়াজ রফতানি করাটাও দাম বাড়ার কারণ বলে মনে করেন মন্ত্রী।
সঙ্কটের মধ্যে চলছে রসিকতাও। বেঙ্গালুরুর এক বধূর মন্তব্য, “সোনার বদলে সাধু শোভন পেঁয়াজের স্বপ্ন দেখলে পারতেন। খোঁড়াখুঁড়ি করে সমস্যার সমাধান হতে পারত।”
|