মুখে কিছু না বললেও ইঙ্গিতটা মিলেছিল আগেই। তাই সোমবার দলের বীরভূম জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখদের পাশে বসিয়ে সাঁইথিয়া রবীন্দ্রভবনে কর্মিসভা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তার পরেও তিনি ভাঙন ঠেকাতে পারলেন না। সভার ৪৮ ঘণ্টা পরেই পুরপ্রধান-সহ ১০ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় জেলার আর কোনও পুরসভাই কার্যত বিরোধীদের দখলে রইল না।
অথচ সোমবার সভায় প্রদীপবাবু বলেছিলেন, “মনিরুল-অনুব্রত কংগ্রেসকে হাজার হুমকি দিক। তাতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না। ওরা কংগ্রেসের কিছুই করতে পারবে না।” ভাঙনের ইঙ্গিত পেয়ে তিনি সভা করেছিলেন, সে কথা স্বীকার করে নেনে প্রদীপবাবু। বুধবার তিনি বলেন, “দল বদল হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েই ওখানে গিয়েছিলাম। বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও কাজ হল না!” তাঁর প্রতিক্রিয়া, “প্রচণ্ড প্রলোভন এবং ভীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে যাঁরা তৃণমূলে গেলেন, ঈশ্বর তাঁদের করুণা করুন।” সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে সাঁইথিয়ায় গিয়ে ফের তিনি কর্মিসভা করবেন বলে প্রদীপবাবু জানান। তাঁর আশ্বাস, “ভুল বুঝিয়ে অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তৃণমূলে। ভুল ভাঙলে আবার তাঁরা কংগ্রেসে ফিরবেন। নতুন করে সাঁইথিয়ায় আমরা সংগঠন গড়ব।” |
“দল বদল হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েই ওখানে গিয়েছিলাম। বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও কাজ হল না!”
— প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য |
|
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, জেলার পুরসভাগুলি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যায় তৃণমূল। অন্য পুরসভাগুলি আগেই নিজেদের দখলে নিয়েছে তৃণমূল। তবে জেলা কংগ্রেসে আঁতুড়ঘর সাঁইথিয়ায় সে ভাবে কোনও দিন থাবা বসাতে পারেনি। ১৬ আসনের সাঁইথিয়ায় আসন বিন্যাস এই রকম কংগ্রেস ১২, তৃণমূল ১, সিপিএম ১, ফব ১ ও বিজেপি ১। এ বারের পঞ্চায়ত নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকেই কংগ্রেসের একাধিক কাউন্সিলরকে ভাঙানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় তৃণমূল। মাস দেড়েক আগে তৃণমূলের একমাত্র কাউন্সিলর শান্তনু রায় দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস-সহ সব রাজনেতিক দল নিয়ে মোট ৯-১০ জনের সমর্থন তাঁর পক্ষে আছে। তিনি অনাস্থার বিষয়েও অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি। তখনকার মতো বুঝিয়ে ঘর বাঁচাতে পারলেও শেষ রক্ষা হল না। কংগ্রেস সূত্রে খবর, বুধবারও ঘর বাঁচাতে একটি বৈঠক হয়। পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান-সহ অধিকাংশ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। উপপুরপ্রধান অনিতা সরকার ও এক কাউন্সিলর ছাড়া সকলেই তৃণমূলে যোগ দেন।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর জুন-জুলাই মাসে এই পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহর বলেন, “সাঁইথিয়ার কংগ্রেস পুরপ্রধান-সহ প্রায় সব কাউন্সিলরই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” তবে ভোটে জিতলে পুরপ্রধান যিনি ছিলেন তিনি থাকবেন, না অন্য কাউকে করা হবে? এই প্রশ্নে, তাঁরা বলেন, “এই ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হইনি। আর কয়েক মাস বাদে নির্বাচন। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপচরিতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন বীরেন্দ্রবাবুরা। অনিতাদেবী বলেন, “তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত দলের সব কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” বীরেন্দ্রবাবুরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |