রাস্তার দু’পাশে রাখা ঠেলাগাড়ি ও রিকশা। ব্যস্ত সময়ে রাস্তা জুড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দোকানের জিনিস ওঠানামা। রাস্তার উপরে উঠে এসেছে পাশের দোকানের ছাউনি।
জামুড়িয়া শহরের নানা এলাকায় এই সব চিত্র নিত্যদিনের। পুরসভা ও পুলিশ-প্রশাসন নানা পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছে বারবার। কিন্তু যানজটের ফাঁস থেকে মুক্তি পায়নি শহর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাজারে ব্যাপারীদের সারাদিন মাল ওঠানামার জেরেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যানজটে নাকাল হতে হয় পুরবাসীকে। তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় জানান, খনি-শিল্পাঞ্চলে জামুড়িয়া প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ চাল ও ঘিয়ের পাইকারি বাজার। ১৯৯৫ সালে সেখানে বামফ্রন্ট পুরসভা গঠন করে। পূর্ণশশীবাবু অভিযোগ করেন, তার পর থেকে কার্যক্ষেত্রে মানুষের উপরে করের বোঝা বাড়া ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। যানজটে জেরবার পুরনো এই শহর। পরিস্থিতি এমনই যে অনেক সময়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় আটকে থাকতে হয় অ্যাম্বুল্যান্সকেও। |
অর্ধেক রাস্তা জুড়ে চলছে মালপত্র তোলানামা। জামুড়িয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত পণ্য খালি বা বোঝাই করা যাবে। দিনের বাকি সময়ে রাস্তার যে কোনও এক দিকে গাড়ি রেখে মালপত্র তোলা যাবে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেই নির্দেশ কেউ মানে না। নির্দেশ পালন করানোর ব্যাপারে পুলিশের কোনও ভূমিকা এখনও নজরে পড়েনি।
রাস্তার দু’পাশ সব্জি, মাছ-সহ নানা পসরা সাজিয়ে বসেন জবরদখলকারীরা। পুরসভা ও পুলিশ-প্রশাসন বারবার পরিকল্পনা করেছে। সর্তকও করা হয়েছে ওই ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। আসানসোল মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, শহরে লোকসংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে, যান চলাচলও বেড়েছে। কিন্তু রাস্তার কোনও সম্প্রসারণ হয়নি। উল্টে, ফুটপাথ দখল হয়ে গিয়েছে। ফলে, মূল রাস্তা ধরেই মানুষ হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যস্ত এই শহরেও যখন খুশি মাল তোলা-নামানোর কাজ হচ্ছে। যানজট মাত্রা ছাড়াচ্ছে। বাজার এলাকায় একটা বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে অন্য গাড়ি পাশ দিয়ে বেরোতে পারছে না। এ ছাড়া নন্ডিমোড়, হাটতলায় ফুটপাথ দখল করে ট্রেকার ও রিকশা। প্রশাসন পদক্ষেপ করলে তাঁরা সংগঠনের তরফে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানান সুদীপবাবু। আইএনটিটিইউসি-র ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর মহকুমা সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, “রাস্তা দখল করে যাঁরা ব্যবসা করছেন, দীর্ঘদিন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি।”
জামুড়িয়া বণিক সংগঠনের সম্পাদক অজয় খেতানের অবশ্য বক্তব্য, “ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনেই পণ্য ওঠানামার কাজ করেন। মূল সমস্যা নির্দিষ্ট পার্কিং জোন না থাকা। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় যানজটে জেরবার অবস্থা হচ্ছে শহরের। এ ছাড়া ফুটপাত জবরদখল করে ব্যবসাও সমস্যা তৈরি করেছে।” তাঁরা বণিক সংগঠনের তরফে পুজোর আগে পুলিশ-প্রশাসনকে যানজটমুক্ত শহরের জন্য উদ্যোগী হতে আবেদন করেছেন, জানান অজয়বাবু।
সমস্যা রয়েছে বাসস্ট্যান্ড নিয়েও। আগে প্রধান বাসস্ট্যান্ডটি ছিল হাটতলার কাছে। প্রথমে সেটি সরানো হয় উর্দু জুনিয়র স্কুলের সামনে। ১৯৯৮ সালে শহরকে যানজটমুক্ত করতে ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে প্রধান বাসস্ট্যান্ড নিয়ে যাওয়া হয় থানা মোড়ের কাছে। উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। এই বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের আধুনিক পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৫ বছর পেরোলেও নাজেহালই হতে হয় যাত্রীদের। কারণ, সেখানে যাত্রীদের জন্য কোনও অপেক্ষালয় নেই। রোদ, বৃষ্টিতে যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। নেই পানীয় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সাউয়ের অভিযোগ, “গরমে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি হয়।” গাড়ির চালকেরাও জানান, জলের জন্য ভরসা আশেপাশের চায়ের দোকান। জামুড়িয়া থানার ওসি চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এই শহরের প্রধান সমস্যা পার্কিং ব্যবস্থা। পুরসভাকেই পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।” পুলিশ জানায়, শীঘ্রই ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বণিক সংগঠন, পুরসভা, পরিবহণ সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক হবে। জামুড়িয়ার পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ট্রাফিক পরিষেবা উন্নত করতে পুলিশ কমিশনারেট উদ্যোগী হয়েছে। পুরসভাও সহযোগিতা করছে। বাসস্ট্যান্ডেও পরিষেবা উন্নয়নের চেষ্টা চলছে বলে তাঁর দাবি। |