কাজ করছে মেডিক্যাল টিমও
রোগ ঠেকাতে নলকূপ, কুয়োর জল শোধনের ব্যবস্থা প্রশাসনের
জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা টানা চার-পাঁচ দিন জলে ডুবে ছিল। জলের তলায় ডুবে ছিল নলকূপ, কুয়ো, পুকুরগুলোও। এখন জল সরেছে। দুর্গতরাও ত্রাণ শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে ভাবনা নলকূপ-কুয়োর জলে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে জলবাহিত রোগ দেখা ছড়াচ্ছে। অন্যত্রও নলকূপ, কুয়োর জলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কথা মানছে জেলা প্রশাসনও। বিভিন্ন এলাকায় জল শোধনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার নলকূপের জল শোধন করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “যে এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল, সেখানকার নলকূপ, কুয়ো, পুকুরগুলোয় সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলার সর্বত্রই এ কাজ চলছে।”
কংসাবতীর বাঁধ ভেঙে ঢোকা জলে ডুবে রয়েছে নলকূপ। পানীয় জল
না পেয়ে হতাশ কেশপুরের বিশ্বনাথপুর গ্রামের এক বাসিন্দা ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বন্যার জল নামার পরপরই সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৩২ হাজার ৮৯৮টি নলকূপে, ২৫টি কুঁয়োয়, ৭৬৭টি পুকুরে সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর জল ছাড়ায় গত সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বহু গ্রাম জলে ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপীবল্লভপুর ১ এবং ২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, কেশিয়াড়ি, দাঁতন ১, মোহনপুর। ঘাটাল, দাসপুর-১, খড়্গপুর-২, মেদিনীপুর সদর, কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন হয়। সাধারণত জল নামতে শুরু করলেই বিভিন্ন এলাকায় জলবাহিত রোগ ছড়াতে শুরু করে। অপরিস্রুত জল থেকেই রোগ ছড়ায়। ডায়েরিয়া, ডেঙ্গি, টাইফয়েড, অজানা জ্বর, সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ায় বহু মানুষ আক্রান্ত হন।
গত অগস্টে টানা বৃষ্টির ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। তখন প্রায় ৪ হাজার মানুষ সাধারণ জ্বর- সর্দি- কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রায় ১ হাজার জন অজানা জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রায় ১৫০ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। এ বারও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ইতিমধ্যে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেখা গিয়েছে, দূষিত জল থেকেই এই রোগ ছড়িয়েছে। কোথাও কুয়োর জল পান করেন বাসিন্দারা। কোথাও বা পুকুরের জল। এদিকে, জেলার সব এলাকার জল যে পরিস্রুত নয়, ইতিমধ্যে তার প্রমাণ মিলেছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “মাস দুয়েক আগে যে সব এলাকায় ডায়েরিয়া ছড়িয়ে ছিল, সেই সব এলাকার জলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যখন রিপোর্ট আসে, তখন দেখা যায়, যে সংখ্যক এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তার ৮০ ভাগ এলাকার জলই পান করার অনুপযুক্ত। অর্থাৎ, পরিস্রুত নয়।” তাঁর কথায়, “সাধারণত, ১০০ মিলিলিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যদি ১০ বা তার বেশি হয়, তবেই সেই জল পান করার উপযুক্ত বলে ধরা হয়। অথচ, রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সংখ্যক এলাকা থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, তার ৮০ ভাগ এলাকার ১০০ মিলিমিটার জলে কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ২০০ বা তার বেশি।”
দাঁতনে জলমগ্ন জমিতে নষ্ট হচ্ছে ধান।
পরিস্থিতি দেখে এ বার জলমগ্ন এলাকার নলকূপ, কুয়োর জলে সংক্রমণ রোধে জোর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ইতিমধ্যে জল শোধনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, সেখানে মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে। আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের সতর্কও করা হচ্ছে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (মেদিনীপুর ডিভিশন) সুদীপ সেন বলেন, “জল নামার পর থেকেই জল শোধনের কাজ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ এলাকার নলকূপ, কুয়োয় সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। সামান্য কয়েকটি এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। ফলে, সমস্যা হচ্ছে। জল নামলেই এই সব এলাকার নলকূপ, কুয়োর জল শোধন করা হবে।”

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.