সারি সারি ফাঁকা শয্যা, অচল ইনভার্টার, ভাঙা প্রাচীর আর আগাছা নিয়েই খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তার উপর চিকিত্সক ও নার্সের সংখ্যাও বেশ কম। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রায় কিছুই মিলছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন কাঁকসা র এক বড় অংশের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করাতেই কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই হাল। বিএমওএইচ সাথী রায়চৌধুরী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আদিবাসী অধ্যুষিত কাঁকসার এক বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। অথচ অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ দু’জায়গাতেই চিকিত্সা পরিষেবা মেলে না বলে রোগীদের অভিযোগ। বছর চারেক আগে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। গড়া হয় উন্নতমানের অপারেশন থিয়েটার। তবুও রোগীর পরিস্থিতি একটু জটিল হলেই তাঁদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এছাড়া ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ও পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক সংযোগকারী দার্জিলিং মোড়ের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদেরও বেশিরভাগ সময়ে আনা হয় এখানে। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকায় প্রাথমিক চিকিত্সার পরেই তাঁদেরও অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। |
এলাকার ভবতোষ বিশ্বাস, তপন দাস, বর্ণালী সিংহদের অভিযোগ, পাকা রাস্তা থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢোকার প্রধান রাস্তাটি একেবারে বেহাল। ফলে রোগীদের নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বর আগাছায় ভরা, সীমানা প্রাচীরও ভাঙা। তাঁরা আরও জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনভার্টারটি বহু দিন ধরেই অচল। ফলে বিদ্যুত্ চলে গেলে গরমে, আঁধারে পড়ে থাকতে হয় রোগীদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিএমওএইচের কাজের প্রতি অনীহাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুরবস্থার কারণ। তাঁদের অভিযোগ, তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না। তাঁর নজরদারি না থাকাতেই ঢিমেতালে চলছে কেন্দ্রটি।
বিএমওএইচ সাথী রায়চৌধুরী অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪ জন চিকিত্সক, ৫ জন নার্স এবং ৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন। ওই ক’জনকে নিয়ে ৩০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানো বেশ কঠিন। তিনি বলেন, “তবু সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে আমরা সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।” তাঁর দাবি, প্রয়োজন না হলে কোনও রোগীকেই রেফার করার ঘটনা ঘটে না। আর নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না আসার বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমানে তাঁর পোস্টিং কামারহাটিতে। সেখানেই আবাসন রয়েছে। |
ডাক্তার না থাকায় সমস্যায় পানাগড় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। |
কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর কোনও আবাসন নেই। ফলে রোজ যাতায়াত করে কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, “আমি নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসি না একথা ঠিক নয়।” কিন্তু দু’জায়গাতেই সাথীদেবীকে কাজ করতে হচ্ছে কেন? আসানসোল স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) মনিকাঞ্চন সাহা জানান, এমনিতেই কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিত্সক নেই। এই অবস্থায় সাথীদেবীকে ছেড়ে দিলে আরও একজন চিকিত্সক কমে যাবে। সিএমওএইচ বলেন, “প্রায় সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিত্সকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবু সাধ্যমতো চেষ্টা করা হয় চিকিত্সা পরিষেবা দিতে।” কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। |