গত চার দিন ধরে গোটা হাসপাতালে রয়েছেন এক জন চিকিত্সক। তালাবন্ধ রয়েছে মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগ। বন্ধ রয়েছে প্রসূতি বিভাগও। অনেক দিন ধরেই বন্ধ শিশু বিভাগ। এই সমস্যা মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের।
কাটোয়া মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন চিকিত্সক দরকার। কিন্তু সেই সংখ্যা কোনওদিনই পূরণ হয়নি। আগে ছিলেন ছয় জন চিকিত্সক। এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার। তার মধ্যে কেতুগ্রামের কান্দরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিত্সক সাগর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হলেও তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগ দেননি। ফলে, প্রকৃতপক্ষে সংখ্যা তিন। এর মধ্যে একজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আর একজন অসুস্থ থাকায় বাড়ি চলে গিয়েছেন। বর্তমানে চিকিত্সক হিসেবে রয়েছেন দাঁতের চিকিত্সক অভিজিত্ দাস।
মঙ্গলবার দুপুরে সিঙ্গত হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গোটা হাসপাতাল চত্বরেই ফুটে উঠছে অব্যবস্থা ও বেহাল পরিকাঠামোর ছবি। মেডিসিনের বহির্বিভাগের দরজা বন্ধ। একই সমস্যা প্রসূতি বিভাগেও। অন্তর্বিভাগে কোনও রোগী ভর্তি নেই। শয্যাগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। রোগী ও চিকিত্সক কেউ না থাকায় গোটা হাসপাতাল ধুলো আর ঝুূলে ভর্তি। এক্স রে ঘরেও জমেছে ধুলো। একমাত্র দাঁতের চিকিত্সক অভিজিত্বাবু রোগী দেখছেন। অভিজিতবাবু বলেন, “গোটা হাসপাতালে এখন আমি একমাত্র চিকিত্সক। দাঁতের চিকিত্সার জন্য এত রোগী আসছেন যে অন্য রোগী দেখার সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না।” তিনি জানান, বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে ডামাডোল চলছে. তবে এই অবস্থা এর আগে হয়নি। |
হাসপাতালের এক ফার্মাসিস্ট বলেন, “চিকিত্সক না থাকায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা খুব কম। আমরা কার্যত মাছি তাড়াচ্ছি। খুব গরিব রোগী এলে আমরা ওষুধ দিয়ে সাহায্য করছি মাত্র।” তিনি জানান, কয়েক দিন আগেও গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকতেন। মেডিসিন ও প্রসূতি বিভাগ মিলিয়ে ভর্তি থাকতেন গড়ে ২৫০ থেকে ৪০০ জন রোগী। প্রতিদিন ৪-৫ জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হত। কিন্তু চিকিত্সক সঙ্কটে সবটাই এখন অতীত। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আধুনিক পরিকাঠামো যুক্ত অপারেশন থিয়েটার থাকলেও গত ২০ বছরে চিকিত্সকের অভাবে এক দিনের জন্যও সেটা ব্যবহার হয়নি।
মঙ্গলবার কৈচর ঘোষপাড়া, পালিশ গ্রাম থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা দেবযানী ঘোষ, রাবিয়া বিবিরা। তাঁদের কথায়, “সপ্তাহখানেক আগে দেখিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিত্সকরা কিছু দিন পরে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু এসে দেখি চিকিত্সকই নেই। জানি না কী হবে!” শুধু প্রসূতিদেরও নয়, ডায়েরিয়া রোগীদেরও মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতাল কিংবা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা আছে। শুধু সিঙ্গত হাসপাতালেই নয়, জেলার অন্য গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও চিকিত্সকের অপ্রতুলতা রয়েছে। আমরা অন্য জায়গা থেকে চিকিত্সক নিয়ে এসে সমস্যা সামলানোর চেষ্টা করছি।” |