স্ট্যান্ডে ঢোকার পথেই একাধিক গর্ত। রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে ঢুকতে হয় স্ট্যান্ডে। ভিতরে যাত্রীদের দাঁড়ানোর শেড নেই। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাসে উঠতে বাধ্য হন যাত্রীরা। জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি। পানীয় জলের ব্যবস্থা বলতে একটি নলকূপ। আশির দশকের শেষে তৈরি হওয়া মালবাজার বাস স্ট্যান্ডের এমনই বেহাল দশা। এমনকী কোন বাস কখন আসবে অথবা বাস স্ট্যান্ড থেকে ছাড়বে তার কোনও ঘোষণাও করা হয় না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্ট্যান্ড নির্মাণের পরে সংস্কারের কাজ হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণও হয় না বলে অভিযোগ। যার জেরেই ডুয়ার্সের অন্যতম ব্যস্ত বাস স্ট্যান্ডে যাত্রী স্বাচ্ছন্দের কোনও ব্যবস্থাই নেই বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
ডুয়ার্সের নানা এলাকার পর্যটকদের বেশিরভাগ অংশকেই মালবাজার শহরে আসতে হয়। সে কথা মাথায় রেখেই আশির দশকে প্রায় দেড় একর জায়গা জুড়ে মালবাজারে বাস স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়। বর্তমানে স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ৯০টি বাস চলাচল করে। পর্যটনের মরসুমে বাসের সংখ্যা শতাধিক হয় বলে বাসস্ট্যান্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এবং বীরপাড়া এবং জঁয়গাগামী বাসে ফি দিন অন্তত ৩০০ জন নিত্যযাত্রী বাসস্ট্যান্ডে আসেন। পর্যটকদের সংখ্যা ধরলে গড়ে শ’পাঁচেক যাত্রী স্ট্যান্ডে আসেন বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
বাস স্ট্যান্ডের হাল ফেরাবে কে, তা নিয়েই টানাপোড়েন চলছে পুরসভা ও জেলা পরিষদে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগম বলেন, “মালবাজার বাসস্ট্যান্ডের বিষয় শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।” মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রতীম সরকার বলেন, “জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত মালবাজার বাসস্ট্যান্ডে পুরসভা সংস্কার কাজ চালাতে পারে না। তবু জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলব।” সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের তরফেও বৈঠক করা হবে বলে মহকুমা শাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।” অবস্থানগত দিক থেকে বাসস্ট্যান্ডের গুরুত্ব রয়েছে। স্ট্যান্ডের পেছনেই রয়েছে মহকুমা শাসকের দফতর, ট্রেজারি অফিস, নানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। স্ট্যান্ডের পাশেই রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মালবাজার ট্যুরিস্ট লজ। ওই সব অফিস এবং লজে যেতে বাস স্ট্যান্ডের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। দেশ বিদেশের পর্যটকদেরও খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হয়। জেলা মোটরকর্মী ইউনিয়নের মালবাজার শাখা সম্পাদক চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, “বাস স্ট্যান্ডের দ্রুত সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের দাবিতে মহকুমা প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েক দফায় স্মারকলিপি দিলেও ফল মেলেনি।” নিত্যযাত্রী সুকান্ত দাস, সুব্রত ঘোষরা অভিযোগ করে বলেন, “হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে পর্যটকদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দিনের পর দিন এমন অব্যবস্থা চললেও কেউ এই ব্যাপারে উদ্যোগী হননি।” |