শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকের দফতরে কর্তব্যরত দুই পুলিশকর্মীর ইউনিফর্মের কলার টেনে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে জেলা ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে করে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে দার্জিলিং জেলা ছাত্র পরিষদ নেতা প্রীতম সরকার বচসায় জড়িয়ে পরেন বলে অভিযোগ। গাড়ি নিয়ে দফতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ছাত্র পরিষদ নেতা পুলিশ কর্মীদের দিকে তেড়ে যান বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। দুই পুলিশকর্মীর সঙ্গে তর্কাতর্কির সময়ে আচমকা তাঁদের জামার কলার ধরে ছাত্র পরিষদ নেতা প্রীতমবাবু ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকেই অভিযুক্ত নেতাকে গ্রেফতার করেছে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ।
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কে সাবারি রাজকুমার বলেন “কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া এবং মারধরক করার অভিযোগে প্রীতম সরকার নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আইনজীবী ও মহকুমা শাসকের দফতরের কর্মী ছাড়া বাইরের কোন গাড়ি পার্কিং করা নিষেধ রয়েছে দফতরের চত্বরে। এদিন দুপুর ১২ টা নাগাদ প্রীতম রায় গাড়ি নিয়ে মহকুমা শাসকের দফতরে ঢুকতে গেলে পুলিশকর্মীরা বাধা দিলেও, তিনি জোর করে দফতরের ভেতরে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েন। এক আইনজীবীকে নিতে এসেছেন বলে তিনি দাবি করেন বলে জানা যায়। ফেরার সময়ে কোনও আইনজীবীকে গাড়িতে দেখতে না পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে বাধা দিলে তিনি বচসায় জড়িয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্ত নেতার সঙ্গে থাকা তাঁর পরিবারের সদস্যরাও পুলিশকর্মীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। কর্তব্যরত জেলা পুলিশের দুই হোমগার্ড সুকুল মার্ডি এবং মঙ্গল সিংহ জানিয়েছেন, “গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের জামার কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।”
যদিও ধৃত প্রীতমবাবু দাবি করেছেন, “পুলিশকর্মীরা ইচ্ছে করে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টাও করে পুলিশকর্মীরা। শিলিগুড়ি প্রশাসন যে ভাবে কাজ করছেন আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। পুলিশ আমার সঙ্গে আজকে যা করেছে তা কাঙ্খিত নয়।” প্রীতমবাবুর ঘটনার সঙ্গে অবশ্য সংগঠনকে জড়াতে রাজি নয় জেলা ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব। সংগঠনের জেলা সভাপতি অমিত তালুকদার বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি কেউ আইন ভেঙে কাজ করেন তবে পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। দলের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ছাত্র সংগঠনের নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর মালাকারও। তিনি বলেন, “এই ধরণের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। যা হয়েছে তা ঠিক হয় নি।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জীবন মজুমদার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। দলের সঙ্গে এই ঘটনার কোন যোগাযোগ নেই। পুলিশের গায়ে হাত দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি হলে অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে।”
মহকুমা শাসকের দফতরে গাড়ি রাখার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শুভাশিস ঘোষ বলেন, “ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম না। তবে বাইরের গাড়ি রাখার বিষয়টি নিয়ে আগেও বাধা দেওয়া হয়েছে।” |