|
|
|
|
নাবালিকা বিয়ে চলছেই, শিক্ষার অধিকার
হারাচ্ছে রাজ্যের শিশুকন্যারা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বর্ধমানের মন্তেশ্বরের সোনমের (নাম পরিবর্তিত) বয়স তখন মোটে তেরো। পড়াশোনায় খুবই ভাল। উজ্জ্বল দুই চোখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। পাড়ারই একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্রী ছিল সে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই তার বিয়ে ঠিক করলেন বাবা। বিয়ে করবে না বলে বাড়িতে অনেক কাকুতি মিনতি করেও কোনও লাভ হল না। বিয়ে হল। কিন্তু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছাটা মরে গেল না সোনমের। হয়তো পরে মরেই যেত, যদি না একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হত সোনমের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা উদ্যোগী হয়ে সোনমের বাবা-মা ও স্বামীর সঙ্গে কথা বললেন। অবশেষে বাবার বাড়িতে থেকে সোনমের পড়াশোনার ব্যবস্থা হল। সে আবার ভর্তি হল একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে।
শুধু বিয়ে নয়, হাতের নাগালে স্কুল না থাকলেও রয়েছে স্কুলছুট হওয়ার সম্ভাবনা। যেমন কলকাতার ইয়াসমিন। বাড়ি বলতে তপসিয়ার বস্তি। ছোট বয়সে পাড়ারই এক মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সে। বাবা-মা চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন। বেশ কিছুদিন পড়াশোনা করার পরে স্কুলছুট হয় সে। কারণ স্কুলের রাস্তা অনেকটা দূর। যাতায়াতে বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। পরে তাকে ধরে নিয়ে আসেন শ্রমিক স্কুলের দিদিমণিরা। বেশ কিছুদিন ধরে শ্রমিক স্কুলে পড়াশোনা করছে সে।
কিন্তু সোনম বা ইয়াসমিনরা ব্যতিক্রম। ওরা সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের সাহয্য পেয়েছিল কাকতালীয় ভাবে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মেয়েরই এমন ভাগ্য নয়। ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়ে তারা হারায় শৈশব। অন্য দিকে, স্কুলছুট মেয়ের ঠাঁই হয় কারখানার চৌহদ্দিতে, শ্বশুরবাড়িতে, বাবুর বাড়িতে অথবা যৌনপল্লিতে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবসে এই বিষয়গুলিই তুলে ধরল একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চাইল্ড রাইটস এ্যান্ড ইউ (ক্রাই)-এর রিপোর্ট। |
|
ভারতে শিশুকন্যা |
• প্রতি চারজনে একজন মেয়ে প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুট হয়।
• তিনজনে একজন স্কুল ছাড়ে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে।
• দু’জনে একজন স্কুলছুট হয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে।
• ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়ে যায় ৪৫ শতাংশ মেয়ের। |
|
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে প্রতি চার জনে এক জন কন্যাশিশু স্কুলের প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুট হয়। সমস্যাটা দু’দিক থেকেই। বিয়ে হয় বলে স্কুল ছাড়ে, স্কুল ছাড়ে বলে বিয়ে হয়।
কিন্তু কেন স্কুল ছাড়ে এই মেয়েরা? সারা দেশের ১৩টি রাজ্যে প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্কুলগুলিতে সমীক্ষা করেছে ক্রাই। দেখা যাচ্ছে, দশে আটটা স্কুলেরই মেয়েদের জন্য আলাদা করে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে কৈশোর পেরোনোর পরে শুধুমাত্র শৌচাগারের সমস্যার জন্যই স্কুলে যেতে চায় না বেশির ভাগ মেয়ে। উল্টো দিকে, বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তাদের। অপরিণত মা অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়। মায়ের জীবনের যেমন ঝুঁকি থাকে, তেমনই ঝুঁকি থাকে শিশুর স্বাস্থ্যেরও। ক্রমশ দীর্ঘ হয় অসুস্থ প্রজন্মের তালিকা।
সংস্থার পূর্বাঞ্চল অধিকর্তা অতীন্দ্রনাথ দাস বলেন, “ভারতে শিশুকন্যারা এত ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় যে কোনও এক দিক থেকে তার অধিকারের প্রশ্নটিকে দেখা যায় না। কোনও এক ভাবে তাকে সে অধিকার এনে দেওয়াও সম্ভব নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উপর এঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও এলাকার মানুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মেয়েদের ক্ষমতায়ন কোন ব্যক্তির ক্ষমতায়ন নয়, তা আসলে সমাজ ও দেশের উন্নয়ন ও বৃদ্ধির একক।” |
|
|
|
|
|