পথের দুঃখ
রক্ষণাবেক্ষণ নেই, দীর্ঘ অবহেলায় জরাজীর্ণ জিটি রোড
ত নামডাকই সার। রক্ষণাবেক্ষণে শূন্যের বেশি নম্বর জুটবে না এই রাস্তার মার্কশিটে। দীর্ঘ দিন অবহেলা ও উপেক্ষায় আজ সর্বাঙ্গে ক্ষত হাওড়ার ‘লাইফলাইন’ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো পুজোর আগে রাজ্যের খারাপ রাস্তাগুলি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই মেরামতির তালিকায় ঠাঁই মেলেনি জি টি রোডের। তাই পুজোর সময়ে সামান্য তাপ্পি মারার কাজটুকুও করা হয়নি। ফলে পুজোর চার দিন জিটি রোডের ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, ভাঙা পাথর, জমা জলকে সঙ্গী করেই পথ চললেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হয় জিটি রোড।
তবে কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন বেলুড় মঠে গিয়েছিলেন, তখন জিটি রোডের ভাঙা অংশে ইট ফেলে মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শেষ পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়ে যাননি। কয়েক দিন যেতে না যেতেই সেই তাপ্পিও উঠে গিয়ে একেবারে দাঁত বার করা অবস্থা হয় জিটি রোডের। হাওড়ার জেলাশাসক থেকে পুলিশ কমিশনার, মেয়র, চেয়ারম্যান সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করছেন অন্যতম রাজ্য সড়ক জিটি রোডের খারাপ অবস্থার কথা। প্রত্যেকেই রাস্তা মেরামতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে এখনও ভয়ঙ্কর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পূর্ত কর্তাদের কথায়, “রাস্তার ধারের নালা দীর্ঘ দিন ধরে আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। হাওড়া ও বালি পুরসভার সে দিকে কোনও নজর নেই। তার ফলে জল বেরোতে না পেরে রাস্তায় জমে থাকছে। সে জন্যই রাস্তা ভাঙছে।” পুজোর আগেই পূর্ত দফতর, হাওড়া ও বালি পুরসভা একসঙ্গে বৈঠক করে। তাতে পূর্ত কর্তারা দুই পুরসভাকে নিকাশি ব্যবস্থা উন্নতি করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু দুই পুরকর্তৃপক্ষই একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
বালি খাল থেকে শুরু করে কাজীপাড়া পর্যন্ত ১৪ কিমি এলাকার মধ্যে সব থেকে ভয়ঙ্কর অবস্থা লিলুয়া জয়সবাল হাসপাতাল থেকে শুরু করে ডনবস্কো মোড় পর্যন্ত। প্রায় ৫০০ মিটার এই রাস্তার দু’পাশে এক চিলতে চলার জায়গা। সেখান দিয়েই হাঁটছে মানুষ। রাস্তার মাঝে প্রায় আড়াই-তিন ফুট গর্ত। তাতে জমে রয়েছে বর্ষার জল। কোনও রকমে বিপদ এড়িয়ে দুলকি চালে ওই অংশটুকু পার করছে যানবাহন। অনেক সময়েই যাত্রী বোঝাই বাস, কিংবা ছোট গাড়ি গর্তে আটকে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট। স্থানীয় বাসিন্দা উমেশ রাই বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটা রাস্তার এই অবস্থা! কিন্তু কারও কোনও হেলদোল নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।” হাওড়া সিটি পুলিশের তথ্য বলছে, দিনে গড়ে কয়েক হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। রাস্তার এই অংশেই তিনটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ, অফিস, ব্যাঙ্ক।
এ ছাড়াও বেলুড় শ্রমজীবি হাসপাতাল, বালি নিমতলা এলাকাতেও পিচ উঠে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে। হাওড়া ময়দান এলাকার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। মেট্রো রেলের কাজের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই ওই অংশে জিটি রোড বন্ধ। সেই অংশের পাশাপাশি শরৎ সদনের পাশ দিয়ে বিকল্প যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তা-ও ভেঙে গিয়েছে। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের সাফাই, বর্ষা মিটলে সারাইয়ের কাজ হবে। জিটি রোডের ভাঙা রাস্তার কারণে পথ দুর্ঘটনায় এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুও হয়েছে লিলুয়ায়।
পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অরূপরতন মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষা মিটলেই বিটুমিনাসের কাজ করা হবে। তবে যে সমস্ত অংশ বেশি ভাঙছে, সেগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে কংক্রিট করা হবে।” তবে তাঁর মতে, জমা জল যেমন রাস্তা খারাপের একটি কারণ, তেমনই জিটি রোডের নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ, জলের পাইপলাইন যাওয়ার ফলে প্রতিনিয়ত রাস্তা খোঁড়া হয়। পরে সেখানে প্যাচওয়ার্ক করা হলেও ফাটল থেকে যায়। তাতেই জল নীচে ঢুকে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। যদিও বালি এবং হাওড়া, দুই পুরকর্তৃপক্ষ এ বারেও নিকাশিনালা সাফাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় সেরেছেন।
দুয়োরানি জিটি রোডের ভাগ্যে সংস্কারের প্রলেপ কত দিনে পড়ে, তা-ই এখন দেখতে চান হাওড়াবাসী!

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.