কলকাতা শহরের দুর্গাপুজোর পাশাপাশি বহু মানুষ কলকাতা শহর লাগোয়া দুই জেলার পুজো নিয়েও পুজোর দিনগুলিতে মেতে ওঠেন। কারণ থিমের ভাবনায়, আড়ম্বরে সে সব পুজোও চোখ টানে। তবে থিমের চাকচিক্য বা আড়ম্বর নয়, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর দুর্গাপুজো এ নজর কাড়ে শারদ সাহিত্যে। পুজোর আড়ম্বরের পাশাপাশি এখানকার পুজোর উদ্যোক্তারা যে ভাবে প্রতিবছর বিভিন্ন শারদ সংখ্যা প্রকাশে যে ভাবে উদ্যোগী হন তা বোধহয় রাজ্যের আর কোনও জেলার দুর্গাৎসবে দেখা যায় না।
পুজোর সময় সাহিত্য পত্রিকা ও পুজো কমিটিগুলির সুভ্যেনির (বেশিরভাগউ সাহিত্য নির্ভর) প্রকাশের ঐতিহ্য বনগাঁর দীর্ঘদিনের। সচরাচর কি কলকাতা কি শহরতলির বিভিন্ন পুজো কমিটি পুজো উপলক্ষে যে সুভ্যেনির প্রকাশ করে সেগুলির বেশরিভাগই দেখা যায় বিজ্ঞাপনে ভারাক্রান্ত। সেদিক থেকে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন পুজো কমিটির সুভ্যেনিরগুলিতে বিজ্ঞাপনের অংশগ্রহণ থাকলেও তা বহুলাংশেই ঢাকা পড়ে যায় ভাল মানের গল্প, কবিতায়, প্রবন্ধে। এ বার বনগাঁয় ভাল শারদ পত্রিকা ও সুভ্যেনিরে ভরে গিয়েছিল পুজো মণ্ডপগুলি। বনগাঁ শহরের মধ্যে যশোহর রোডের ধারে ও বনগাঁ-চাকদহ সড়কের পাশে পুজোর দিনগুলিতে বসেছিল সাহিত্য পত্রিকার স্টল। যেখানে সব সময়েই দেখা গিয়েছে সাহিত্য অনুরাগীদের ভিড়। সেখানে যেমন কাউকে পত্রপত্রিকা কেনার পরে চলে যেতে দেখা গিয়েছে, তেমনই দেখা গিয়েছে কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনও স্টলে বসে সদ্য প্রকাশিত কোনও নতুন লেখকের রচনার রসাস্বাদন করে চলেছেন। |
অভিযান সঙ্ঘের সুভ্যেনির ‘অভিযান’, ঐক্য সম্মিলনীর ‘ঐকান্তিক’, ১২-র পল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বোধন’, প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের ‘চন্দ্রবিন্দু’, বিদ্যায়তন ক্লাবের ‘ঝিনুক’, এগিয়ে চলো সঙ্ঘের ‘মধুকর’ এ বার মেজাজে অনেকটাই লিটল ম্যগাজিন হয়ে উঠেছে। নিবন্ধ, কবিতার পাশাপাশি অভিযানে কচিকাঁচাদের জন্য আলাদা পাতা করা হয়েছিল। ঐকান্তিকে প্রকাশিত হয়েছে কবিতা, গল্প, রম্যরচনা, প্রবন্ধ। বনগাঁর কবি-সাহিত্যিকদের চোখে অবশ্য ক্লাব সুভ্যেনিরগুলির প্রচ্ছদে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। অনেকের অভিমত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিন্তা-ভাবনায় দৈন্যতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেকের ভাল লেগেছে অভিযান, বোধন এবং গোপালনগর ফ্রেন্ডস কর্নার ক্লাবের ‘বৃষ্টি’। মুস্তাফিপাড়া যুবগোষ্ঠীর ‘সংহতি’, রেটপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের ‘কণিষ্ক’, আমলাপাড়া অ্যাথলেটিক ক্লাবের ‘সৈকত’, গাঁধীপল্লি বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের ‘একতা’, রামনগর স্পোর্টিং ক্লাবের ‘সহমত’, উজ্জ্বল সঙ্ঘের ‘সমতা’ ও সাহিত্যের উপাদানে সমৃদ্ধ। কয়েকটি সুভ্যেনিরে আবার দেখা গিয়েছে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের রচনা।
পুজোর সময় সুভ্যেনিরে সাহিত্যের আমদানি প্রসঙ্গে বিভিন্ন পুজো কমিটির বক্তব্য, আগে পুজোয় প্রকাশিক সুভ্যেনিরের গোটাটাই ভর্তি থাকত বিজ্ঞাপনে। ফলে একমাত্র বিজ্ঞাপনদাতারা ছাড়া আরও কেউ উল্টেও দেখতেন না সে সব। বিজ্ঞাপনদাতাদের কানে সে খবর পৌঁছলে তাঁরা ক্রমশ বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছিলেন। ফলে পুজোর বাজেটে টান পড়ায় প্রমাদ গুনতে থাকে পুজো কমিটিগুলি। এই অবস্থা থেকেই উঠে আসে সুভ্যেনিরগুলিতে বিভিন্ন নামী লেখকের রচনা প্রকাশের ভাবনা। ফলও মেলে হাতে হাতে। সুভ্যেনিরগুলি সাধারণের কাছে সমাদৃত হতে থাকে। ক্রমশ সুভ্যেনিরগুলিতে নামী লেখকের রচনার পাশাপাশি ঠাঁই পেতে থাকে নতুন লেখকের রচনাও। এতে উৎসাহ আরও বাড়ে। ব্যস সেই থেকেই চলছে। যা আজ বনগাঁর পুজোর আবশ্যিক থিমে পরিণত হয়েছে। |