|
|
|
|
|
তিয়াত্তরের ইস্টবেঙ্গল
এদের চার গোলে হারাত সুব্রত ভট্টাচার্য |
|
সত্তর দশকের ময়দান কাঁপানো দুই প্রবীণ কোচকে যে দিন মেহতাব-অর্ণব মণ্ডলদের টোটকা দিতে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢুকতে দেখেছিলাম, সত্যি বলতে কী সে দিনই প্রমাদ গুণেছিলাম!
অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়েছে, ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তুতিতে।
ম্যাচের আগে নানান ভাবে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছিল। কারও নাম করছি না। কিন্তু সত্তর দশকের বিখ্যাত কোচেরা, যাঁরা এই প্রজন্মের ছেলেদের কী ভাবে, কোন মানসিকতা নিয়ে এই ম্যাচটা খেলতে হবে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ময়দানের এখনকার ফুটবলারদের তেমন কোনও সম্পর্কই নেই। বর্তমান ফুটবলারদের কার ঠিক কতটা দক্ষতা, ক্ষমতা, কী ধরনের মানসিকতা, সে সব নিয়ে ওই শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন কোচেদের কী টাটকা ধারণা আছে?
জিততেই হবে, জিততেই হবে— গত কয়েক দিন ধরে মেহতাবদের কানের কাছে সবার চিৎকার ইস্টবেঙ্গলকে এই ম্যাচে আমার মতে মারাত্মক চাপে ফেলে দিয়েছিল। এটা ঠিক যে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান জার্সি গায়ে চাপালে সেই ফুটবলারদের সব ম্যাচ জেতার চাপ নিতে শিখতেই হয়। কারণ সমর্থকেরা জেতা ছাড়া কিছু বোঝেন না। কিন্তু সেই চাপটা সমমানের দুটো দলের ম্যাচে সামলানো যায়। ইস্ট-মোহন লড়াইয়ে এখন যে দলের বিদেশিরা বেশি ভাল খেলবে, দশবারের মধ্যে ন’বার সেই দল জিতবে। কিন্তু এএফসি সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ তুলনায় অনেক ভাল, শক্তিশালী দল ছিল। বেশি স্কিলফুল।
আমি বলব না যে, কুয়েত এস সি-কে হারানো অসম্ভব। ওদেরও ডিফেন্স সংগঠনে হোম-অ্যাওয়ে দু’টো ম্যাচেই কিছু ভুলচুক চোখে পড়ল। কিন্তু টিমে ব্যক্তিগত দক্ষতার কয়েক জন ফুটবলার আছে। এই ইস্টবেঙ্গল টিমে যেটার সবচেয়ে অভাব। রোজারিও নামে কুয়েতের ব্রাজিলীয় ফুটবলারটা বল পায়ে ‘অফ দ্য মার্ক স্পিড’-এ ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স লাইনকে বারবার পিছনে ফেলে দিচ্ছিল। এ দিন অণর্বকে কোথায় পিছনে ফেলে দিয়ে গোলটা করল রোজারিও, ভাবলেই ছেলেটার অসাধারণ গতি বোঝা যায়!
|
|
আসলে এই ইস্টবেঙ্গল দলে একজনও ব্যক্তিগত দক্ষতার ফুটবলার নেই। এ ধরনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতার জন্য টিমে কম করে তিন-চার জন থাকতে হবে যারা বল ধরে খেলার ক্ষমতা রাখে। মাঝমাঠে মেহতাবের ওই শুধু ইনস্টেপে চিপ আর পা ছুড়ে ট্যাকলে এ ধরনের ম্যাচ বার করা খুব কঠিন। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই। অ্যাওয়ের মতো এ দিন হোম ম্যাচেও ইস্টবেঙ্গলের দু’জন স্টপার এক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে গোল খেল। অরুণ ঘোষ, অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথা ছেড়েই দিচ্ছি, আমার মতো নগণ্য স্টপারও খেলার সময় সত্যজিৎ ঘোষ, অচিন্ত্য বেলেল, অমিত ভদ্রদের বলতাম, ‘তুই এগিয়ে যা, আমি পিছনে আছি’। সাপ্লাই লাইনের অভাবে এ দিন গ্রাউন্ড পাসের বদলে মোগাদের উদ্দেশে বারবার উপর দিয়ে চিপ বাড়ানো হল। অশোকলালের মতো বিপক্ষের বুদ্ধিমান ডিফেন্ডার আগেই পিছনে চলে গিয়ে ওই সব চিপ বলে-বলে ধরে নেবে। কুয়েতের লম্বা ডিফেন্ডাররাও তাই করেছে।
অশোকলালের কথায় বলতে বাধ্য হচ্ছি, ওদের সেই তিয়াত্তরের ইস্টবেঙ্গল দলটা, যারা পিয়ং ইয়ংকে তিন গোল মেরেছিল, এ দিন কুয়েত এস সি-র সঙ্গে খেললে চার গোলে জিতত। হ্যাঁ, ৪-০। সুধীর কর্মকারদের সেই ডিফেন্স! মাঝমাঠে গৌতম-সমরেশের ওই তীক্ষ্ণ থ্রু আর ৩০-৪০ গজের গোল স্কোরিং পাস! ফরোয়ার্ডে সুভাষ ভৌমিক সে দিন পিয়ং ইয়ংয়ের চার জনকে ‘বিট’ করে গোল করেছিল! ওই রকম ব্যক্তিগত উৎকর্ষের প্লেয়ার ফালোপার টিমে কোথায়? এমনকী দশ বছর আগের আসিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলও মঙ্গলবার যুবভারতীর মাঠে থাকলে দু’গোলে জিতত। কারণ সেই ইস্টবেঙ্গলের তিন বিদেশি— মুসা, ওকোরো, ডগলাস আজকের উগা, চিডি, মোগাদের চেয়ে অনেক ভাল ফুটবলার। তা ছাড়া সেই টিমের ভারতীয় প্লেয়ারদের মানও এখনকার তুলনায় ভাল ছিল। ভাইচুং, সুরকুমার, দীপক মণ্ডল, ফর্মে থাকা অ্যালভিটো ছিল। ষষ্ঠী দুলের মতো একটা কলজে ছিল টিমে! যে এ দিন মাঠে থাকলেও হয়তো আসিয়ান ফাইনালের মতোই বলে দিত, ইউ রোজারিও, আই ষষ্ঠী! |
|
|
|
|
|