সে দিন গ্যালারির চিৎকারে ইস্টবেঙ্গল-ধ্বনি শোনা না গেলেও, ‘সুভাষ অ্যান্ড কোম্পানি’ ইতিহাস গড়েই ফিরেছিলেন শহরে। কিন্তু মঙ্গলবার যুবভারতীর সত্তর হাজার দর্শকের মুখে সারাক্ষণ ‘ইস্টবেঙ্গল-মেহতাব-মোগা’-র নাম লেপ্টে থাকলেও, ‘ফালোপা অ্যান্ড কোম্পানি’ কুয়েতের প্রাচীরে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারল না। উলটে ইস্টবেঙ্গলের এএফসি কাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন বিরতির আগেই ভেঙে চুরমার!
ডেম্পো ম্যাচ হারার পরেই ‘বাই বাই ফালোপা’ রব উঠেছিল কল্যাণী স্টেডিয়ামে। মঙ্গলবার যুবভারতীতে সেই ক্ষোভ আরও বড় চেহারা নিল। ইস্টবেঙ্গলে ট্রেভর মর্গ্যানের দীর্ঘছায়া মুছতে নেমে ফালোপারই যেন ‘অদৃশ্য’ হওয়ার জোগাড়। তিন গোল হজমের দিন সমর্থকদের চিৎকারে মর্গ্যান-ময় যুবভারতী।
ট্যাকটিক্যাল ম্যাচ খেলার কথা দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। খেলেওছে। প্রথম চল্লিশ মিনিট তুলনায় অনেক শক্তিশালী কুয়েত দলটাকে আটকে রাখল। তা সত্ত্বেও ম্যাচ বার করতে পারল না। যার বড় একটা কারণ, খুব বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া। দু ’-একটা মরসুমকে ব্যতিক্রম ধরলে বছরে বড়জোর দু’টো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে এ রকম ফলাফলই হবে। জর্জ টেলিগ্রাফ, এয়ার ইন্ডিয়া-র সঙ্গে এক ধরনের ম্যাচ খেলতে খেলতে, হঠাৎ একদিন এশিয়ার প্রথম সারির একটা ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে, রাতারাতি অন্য ধরনের ফুটবল খেলা সম্ভব?
এই নিয়ে ম্যাচ শেষে আফসোস করতে দেখা গেল অনেককেই। আরও একটা কারণে আফসোস, দ্বিতীয়ার্ধে অত ডিফেন্সিভ না খেললেও চলত। কিন্তু যে দলে মোগার মতো স্ট্রাইকার রয়েছেন, তারা ডিফেন্সিভ না খেলেই বা কী করবে? কুয়েতের রোজারিওর বিদ্যুৎ গতি আর বল কন্ট্রোল দেখে যখন গোটা স্টেডিয়াম মুগ্ধ, তখন মোগার গোল নষ্টের ‘স্কিল’ কেবল বিরক্তিই তৈরি করল। কে বলবে মোগা সুদানের জাতীয় দলের স্ট্রাইকার? গতিবিধি বুঝে বিরতির পরে মোগাকে বসিয়ে বলজিৎকে নামান ফালোপা। কিন্তু তিনি তো আর পরিমল দে নন। নামবেন আর গোল করে দেবেন! সত্তরে পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে মহম্মদ হাবিবের পরিবর্তে মাঠে নেমেই ইস্টবেঙ্গলকে জিতিয়েছিলেন পরিমল দে। আর বলজিৎ নেমে দেখালেন তাঁর অবস্থা মোগার চেয়েও খারাপ। |
প্রথম সেমিফাইনালে কুয়েত এস সি বুঝিয়ে দিয়েছিল অ্যাটাকিং থার্ডে খুব বিপজ্জনক। বক্সের আশেপাশে সেটপিসেও দারুণ দক্ষ। ওই অঞ্চলে তাদের ফ্রি-কিক কিংবা সামান্য খোলা জায়গা ছাড়ার অর্থ আত্মহত্যার সামিল। সেটাই ঘরের মাঠে করল ইস্টবেঙ্গল। ডিফেন্সিভ ব্লকারের জায়গা ছেড়ে মেহতাব ফ্রি-কিক নিতে কুয়েতের বক্সে উঠতেই, কাউন্টার অ্যাটাকে ‘ডাউন দ্য মিডল’ চল্লিশ গজের বিদ্যুৎ গতির দৌড় রোজারিওর। লাল-হলুদের সাত জনকে টপকে যা শেষ হল ইস্টবেঙ্গল গোলপোস্টের ভিতরে। ফালোপা বলছিলেন, “প্রথম গোলটাই সব শেষ করে দিল। যে মনোবল নিয়ে ফুটবলাররা মাঠে নেমেছিল, তখনই সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।” যেটুকু উইং প্লে, ওভারল্যাপিং হচ্ছিল গোলের পরে সব উধাও। মাঝমাঠে বোঝাপড়ার অভাবে নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজিরও খোঁজ পাওয়া গেল না। পরের মিনিটেই কুয়েতের দ্বিতীয় গোল খামিজের। ম্যাচের শেষ দিকে ৩-০ শাহিনের। কুয়েত এসসি কোচ মারিন ইয়ন বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গল যে শুরু থেকে আক্রমণে উঠবে, সেটা আগেই জানতাম। তাই দলের সবচেয়ে গতিময় ফুটবলার খামিজকে নামিয়েছিলাম। ওদের খেলা নষ্ট করার জন্য।”
ইস্টবেঙ্গল হারলেও মঙ্গলবারের ম্যাচ ছিল জমাটি ফুটবল আবহের আদর্শ বিজ্ঞাপন। গ্যালারি জুড়ে সত্তর হাজার দর্শক, বিশ্বমানের গোল, দু’দলের দু’জনের (খামিজ-অর্ণব) লাল-কার্ড— রসদের যেন কোনও খামতি নেই।
আফসোস একটাই, সুযোগ পেয়েও আর্মান্দো কোলাসোর ডেম্পোকে টপকানো হল না ফালোপার ইস্টবেঙ্গলের! |
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, অর্ণব, উগা, সৌমিক, অভিষেক, মেহতাব (তুলুঙ্গা), লোবো, লালরিন্দিকা, জোয়াকিম (রবার্ট), চিডি, মোগা (বলজিৎ)। |