রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজির বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। অথচ সেই নির্দেশিকাই শব্দবাজি তৈরি, মজুত ও চালানের ব্যাপারে কিছু বলেনি। ফলে নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করতে গেলে ওই নির্দেশিকাটাকেই সামনে তুলে ধরছেন বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, ওই শব্দবাজি তৈরি হয়েছে ভিন্ রাজ্যে চালানের জন্য, পশ্চিমবঙ্গে বিক্রির জন্য নয়। এমন অস্পষ্টতার গেরোয় পড়ে হাত কামড়াচ্ছে পুলিশ।
গত ৯ অক্টোবর ওই নির্দেশিকা জারি করে পর্ষদ। তাতে বলা হয়েছে, ৯০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি শব্দের বাজির বিক্রি ও ব্যবহার রাজ্যে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমার মধ্যে কোনও শব্দবাজি তৈরি কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও বাজি ব্যবসায়ীরা। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “পর্ষদের ওই নির্দেশে শব্দবাজি তৈরি, মজুত ও চালান নিষিদ্ধ কি না, সেই সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। আর সেই সুযোগই নিচ্ছেন বাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। আমরা জানি, দীপাবলির আগে ওই সমস্ত শব্দবাজি এই রাজ্যেই ঢুকবে।” রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বাজি প্রস্তুতকারকদের একাংশ তো রীতিমতো তর্ক জুড়ে দিচ্ছেন। ওঁদের বক্তব্য, অন্য রাজ্যে পাঠালে কীসের অসুবিধে? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিষয়টি একটু স্পষ্ট করে দিলে ভাল হত।”
উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া ও নদিয়ার রানাঘাটে পুলিশকে রীতিমতো আটকে দিয়েছেন বাজি প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীরা। শব্দবাজি আটক করতে গিয়েও পুলিশকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে ওই দু’টি জায়গা থেকে খালি হাতে ফিরলেও সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির দাবি, পর্ষদের নির্দেশিকার ভিত্তিতে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গা ও কলকাতার বাবুঘাট থেকে এক টনেরও বেশি শব্দবাজি পুলিশ আটক করেছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবেদন করেছে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি। আজ, বুধবার দিল্লিতে ওই শুনানি হওয়ার কথা। সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় মঙ্গলবার বলেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালত গত ২১ অগস্ট রায় দিয়ে জানিয়েছিল, দেশের অন্যান্য অংশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল করতে হবে। তার পরেও পর্ষদ কী ভাবে ৯০ ডেসিবেলের ওই নির্দেশিকা জারি করতে পারে? জাতীয় পরিবেশ আদালত বিজ্ঞপ্তি (নোটিফিকেশন) জারি করার নির্দেশ দিয়েছিল, সেই জায়গায় পর্ষদ কী ভাবে নির্দেশিকা (অর্ডার) জারি করে? প্রয়োজনে আমরা সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত যাব।”
পরিবেশ আদালতে যখন এই লড়াই, সেই সময়ে পর্ষদকর্তারা তাঁদের নির্দেশিকার অস্পষ্টতার বিষয়ে কী বলছেন? পর্ষদের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “১৯৯৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট শব্দবাজির বিক্রি ও ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করেই প্রথম রায় দিয়েছিল। সেই অনুযায়ীই ৯ অক্টোবরের নির্দেশ জারি হয়েছে।” পরবর্তী সময়ে, ২০০৯-এর ডিসেম্বরে রাজ্য পরিবেশ দফতর পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি তৈরি, বিক্রি, ব্যবহার, মজুত ও চালানও নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। পর্ষদের শীর্ষকর্তা বলেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের পর নির্দেশিকা জারির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়কে সামনে রেখেছি।”
|