শ্রী ফিরছে দিল্লি রোডের, চার লেনের কাজ শীঘ্রই |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • চুঁচুড়া |
এক মাসও হয়নি মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তাই কপাল ফিরছে দিল্লি রোডের!
ডানকুনি থেকে মগরাখন্দে ভরা দিল্লি রোড ধরে ‘নরকযাত্রা’র দিন এ বার শেষ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা চার লেন করার টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তার খোলনলচে বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়ে যাবে। আর তা হলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি আরও একটি উচুঁমানের সড়ক পথ পাবে হুগলি জেলা।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, মোট ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি পর্যায়ে চার লেনের দিল্লি রোড তৈরির কাজ হবে। মুম্বইয়ের একটি সংস্থা ওই কাজের বরাত পেয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ডানকুনি থেকে চন্দননগর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণ হবে। পরবর্তী পর্যায়ে হবে চন্দননগর থেকে মগরা পর্যন্ত। পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে দিল্লি রোডের টেন্ডারের কাজ হয়েছে। আমরা রাজ্যের সমস্ত রাস্তার বরাত দেওয়ার কাজ ই-টেন্ডারের মাধ্যমেই করছি। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আর শেষ হবে নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই।” পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, নতুন চেহারায় দিল্লি রোড তৈরি হলে টোল ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু করা হবে। কারণ, টোল চালু থাকলে রাস্তা সংস্কারের কাজ সহজ হয়। আর্থিক দিক দিয়েও সমস্যা হয় না।” |
এখন দিল্লি রোড এমনই বেহাল। পার ডানকুনির কাছে। ছবি: দীপঙ্কর দে। |
চার লেনের নতুন রাস্তা হবে অন্তত ৬২ ফুট চওড়া। এখনকার ৪০ ফুট চওড়া ওই রাস্তার দুই ধারে ১১ ফুট করে দু’টি লেন তৈরি করা হবে। নতুন লেন তৈরিতে রাস্তার দু’ধারে থাকা পূর্ত দফতরের নিজস্ব জমিই কাজে লাগানো হবে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না বলেই পূর্ত দফতরের দাবি। দিল্লি রোডের উপর কাঠকুন্তী নদীতে যে পরিত্যক্ত সেতুটি রয়েছে, সেখানে হবে নতুন সেতু। সম্প্রসারিত রাস্তার যে অংশে হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথ পড়ছে, সেখানেও একটি ছোট সেতু তৈরি হবে।
বস্তুত, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হওয়ার পর থেকেই দিল্লি রোড তার পুরনো কৌলীন্য হারিয়ে ফেলে। রাস্তাটির রক্ষণাবেক্ষণও ইদানীং তেমন না হওয়ায় রাস্তার হাল দিনদিন শোচনীয় হচ্ছিল। গত মাসের শেষে হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে এই রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেন। প্রয়োজনে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার পরামর্শও দেন মমতা।
দিল্লি রোডের এই দশার জন্য চাপ বেড়ে চলেছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরেও। টোলট্যাক্স দিতে হলেও বেশির ভাগ গাড়ি প্রথম পছন্দ হিসেবে ওই রাস্তাটিকেই বেছে নিচ্ছে। ফলে, দিল্লি রোডের দু’ধারে থাকা পেট্রোল পাম্প, হোটেল, ছোট-বড় দোকানের ব্যবসাও মার খাচ্ছে। পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর চাপ মারাত্মক বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্যই দিল্লি রোডের আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সব মহলের আশা, দিল্লি রোড নতুন চেহারায় ফিরলে তার গুরুত্বও ফিরবে। পূর্ত দফতরের একটি সূত্রের খবর, রাস্তা সংস্কারের বরাত পাওয়া সংস্থা ইতিমধ্যেই কাজ শুরুর ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ পেয়ে গিয়েছে। তাই এখন নিয়ম অনুয়ায়ী সম্প্রসারণের কাজ শুরুতে আর কোনও বাধা নেই। দিল্লি রোডের ধারে রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনে যে সব গাছ কাটা হবে, তার টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে।
ঝাঁ-চকচকে চার লেনের রাস্তা তৈরি অতএব কিছু সময়ের অপেক্ষা!
|