রাজস্থানে জোট গড়ে বামেদের পাশে নীতীশ, কংগ্রেস অখুশি নয়
মাসের শেষে বামেদের ডাকা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সভায় তাঁর দল যোগ দেবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। এ বার জেডিইউ রাজস্থানে আসন্ন বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নিল। এই জোটের নাম হবে ইউনাইটেড ফ্রন্ট (লেফ্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক) বা বাম এবং গণতান্ত্রিক সংযুক্ত মোর্চা। আজ এ কথা ঘোষণা করেছেন দলের সম্পাদক এবং মুখপাত্র কে সি ত্যাগী।
বামেদের সঙ্গে জেডিইউ-এর এই সখ্য নিয়ে পটনা তো বটেই, জল্পনা ছড়িয়েছে দিল্লিতেও। প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়ার পরে তা হলে কি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এ বারে বামেদের সঙ্গেই সামগ্রিক ভাবে জোট বাঁধার কথা ভাবছেন? সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কী হবে?
এই জল্পনা জোরদার হয়েছে দু’টি কারণে। একে তো ৩০ অক্টোবর দিল্লিতে বামেদের ডাকা অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি দলগুলির সভায় যোগ দিচ্ছে জেডিইউ। সেই সভার জন্য গঠিত কমিটিতে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের অমরজিৎ কৌর ও সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদবের সঙ্গে রয়েছেন জেডিইউ-এর কে সি ত্যাগীও। শোনা যাচ্ছে, এই সভায় নিজেও যোগ দিতে পারেন নীতীশ। তার উপরে এ দিন আবার রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের জন্য বামেদের সঙ্গে জোট! এই ক্ষেত্রে এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর জোটের কি আদৌ সম্ভাবনা রয়েছে? কারণ, যে জোটে সিপিএম তথা বামেরা থাকবেন, সেই জোটে মমতা যাবেন না।
জেডিইউ-এর একটি অংশ বলছে, মমতা ইউপিএ ছেড়ে কংগ্রেস-বিরোধিতায় মন দিয়েছেন। আর নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে বিজেপি-র সঙ্গ ছেড়েছেন নীতীশ। তাঁর পক্ষে তাই এখন কংগ্রেস-বিরোধিতায় নামা সম্ভব নয়। কারণ, অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতো নীতীশও জানেন, এখন যতই জোট রাজনীতির যুগ চলুক না কেন, কংগ্রেস বা বিজেপি-র মতো বড় দলের সাহায্য ছাড়া কেন্দ্রে সরকার গঠন অসম্ভব। আসন্ন লোকসভা ভোটের পরে যদি তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার হয়, তা হলে এই দুই বড় শক্তির সমর্থন লাগবেই। নীতীশের পক্ষে এখন বিজেপি-র সঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই কংগ্রেসকে তিনি পুরোপুরি চটাতে পারবেন না।
তা হলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কেন হঠাৎ বামেদের সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছেন?
জেডিইউ তো বটেই, দিল্লির কোনও কোনও কংগ্রেস নেতাদেরও বক্তব্য হল, বামেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানোর অর্থ কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা নয়। বরং, লোকসভা ভোটের পরে হয়তো মোদীকে আটকাতে বামেরাই হাত মেলাবেন কংগ্রেসের সঙ্গে। সিপিএমের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। সীতারাম ইয়েচুরিরা চাইছেন, ভোটের পরে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ক্ষমতায় রাখার জন্যই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানো প্রয়োজন। ফের কারাটরা চাইছেন, বরং তৃতীয় ফ্রন্ট সরকার করুক, আর তাতে সমর্থন দিক কংগ্রেস। তবে যা-ই হোক না কেন, কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার চিন্তা এই মুহূর্তে করছে না সিপিএম। তারা চাইছে, তৃতীয় ফ্রন্টকে শক্তিশালী করে কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষির জায়গাটা মজবুত করতে। সে ক্ষেত্রে নীতীশের সঙ্গে তাঁদের মনোভাবের কোনও ফারাক নেই।
বিভিন্ন কারণে নীতীশ সরাসরি কংগ্রেসের হাত ধরতে চান না। তিনি চান, লোকসভা নির্বাচনে অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি বিরোধী জোটের শক্তি বৃদ্ধি করতে। যাতে ভোট পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের কাছে ওই জোটের গুরুত্ব বাড়ে এবং দর কষার সুযোগ পান।
সে কারণেই বামেদের প্রতি নীতীশ নরম মনোভাব নিয়েছেন।
তৃতীয় ফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নও দেখেন নীতীশ। জেডিইউ-এর এক প্রবীণ নেতার কথায়, “নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। সকলকে পাশে নিয়ে চলার মতো যোগ্যতা একমাত্র তাঁরই রয়েছে।” এর জন্য নিজের রাজ্যে যথাসম্ভব আসন জেতা দরকার। বিহারে লোকসভা আসন ৪০টি। সেখানে লালু ও বিজেপি- মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামলে বড় আসন জয় কঠিন। বিশেষ করে রাজ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে যেখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া রয়েছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে বিহারের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদালাভের ঘটনাকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন নীতীশ। রঘুরাম রাজন কমিটি বিহারকে সব থেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য বলে ঘোষণা করে তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের সুপারিশ করেছে। চিদম্বরম তা মেনেই নিয়েছেন। কিন্তু এখনও সেই ব্যাপারে কাজ এগোয়নি কেন, এই প্রশ্ন তুলে এ বার কেন্দ্রকে চাপ দিতে শুরু করেছেন নীতীশ। জেডিইউ নেতৃত্ব বলছেন, এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস যদি লোকসভা ভোটের আগে মর্যাদা দিয়ে দেয়, তা হলে তাকে নিজের জয় হিসেবেই বর্ণনা করবেন নীতীশ। আর কেন্দ্র যদি না দেয়? তা হলেই তিনি বোঝাতে পারবেন, রাজ্যের হয়ে লড়াইটা তিনিই চালিয়েছেন।
এর মধ্যেই ২৮ তারিখ বিহারে সভা করতে আসছেন মোদী। প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে পটনায় সভা করবেন। এই সভাকে এখন গুরুত্ব দিতে চাইছেন না নীতীশ। বলেছেন, “বিহার এমন একটি রাজ্য, যেখানে এমন সভা লেগেই থাকে। পটনায় একটি দল সভা করছে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।” অর্থাৎ, ভবিষ্যতের পথ তৈরির প্রস্তুতি যেমন নিচ্ছেন এক দিকে, অন্য দিকে শুরু করে দিয়েছেন ‘শত্রুকে’ নস্যাৎ করার কাজও।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.