প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে নির্দেশ
হিন্দালকো-র নথি চাইল সি বি আই
কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে আগেই এফআইআর হয়েছে। এ বার তাঁর সংস্থা হিন্দালকো-কে খনি বণ্টনের বিষয়ে সমস্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (পিএমও) কাছ থেকে চাইল সিবিআই। মামলার তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, একই সঙ্গে রিপোর্ট দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে সে কথাও জানাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশের পরে দিল্লি জুড়ে জল্পনা, তা হলে কি প্রধানমন্ত্রীই এখন সর্বোচ্চ আদালতের মূল লক্ষ্য? কংগ্রেস মহলেও এই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, সুপ্রিম কোর্ট কি অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে? কিন্তু আদালত অবমাননার আশঙ্কায় কেউই মুখ খুলছেন না। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচারবিভাগকে পরোক্ষে আক্রমণও করতে পারছেন না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তবে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময়ে এমন একটি বিতর্কে অস্বস্তিতে দলীয় নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের মধ্যেও এমন বিতর্কের মুখেই পড়েছিল দল ও সরকার। দাগি সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে রায়, তাকে নিষ্ক্রিয় করতে একটি আইন তৈরি করে কেন্দ্র। সেটি দ্রুত কার্যকর করতে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্সও আনা হয়। দলের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী আচমকা সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে সেই অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে উড়িয়ে দিতে বলেন। যার ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত অর্ডিন্যান্স তো বটেই, খারিজ হয়ে যায় বিলটিও। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী সুকৌশলে অর্ডিন্যান্স ও বিলটি খারিজ করতে রাহুলকে দিয়ে বক্তব্য রাখতে চাইছিলেন। কিন্তু সনিয়া-পুত্র যে ভাবে এবং যে ভঙ্গিতে গর্জে উঠেছেন, এবং সেটাও প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকার সময়, তাতেই দল অস্বস্তিতে পড়েছে।
এ বার অস্বস্তিটা অবশ্য তৈরি হয়েছে সিবিআইয়ের নির্দেশে।
ওড়িশার তালবিরা খনি থেকে হিন্দালকোকে কয়লা তোলার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তাই হিন্দালকো-র প্রধান কুমারমঙ্গলম বিড়লা ও তৎকালীন কয়লাসচিব পি সি পারেখের বিরুদ্ধে চলতি মাসে অভিযোগ দায়ের করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, আজ দেশের শীর্ষ আদালতকে সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছে তারা। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, কী কারণে ওই অভিযোগ দায়ের করেছে তারা।
যে ভাবে আজ ফের নতুন করে পিএমও-র কাছে হিন্দালকো সংক্রান্ত নথি চেয়েছে সিবিআই, তাতে যথেষ্ট বিব্রত কংগ্রেস শিবির। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এর পর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং? কারণ, যে সময়ে হিন্দালকো-কে খনি দেওয়া হয়, তখন কয়লা মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রীরই হাতে ছিল। যদি প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতি প্রশ্নে বিরোধীরা কংগ্রেসকে নতুন করে আক্রমণ করার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে দল। যদিও আজ প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নায়ারাণস্বামী দাবি করেন, “সরকারের কিছুই লুকোনোর নেই। আমরা সমস্ত নথি দিতে প্রস্তুত।”
কিন্তু মুখে এ সব বললেও কংগ্রেস নেতারা নিজেদের অস্বস্তি লুকোতে পারছেন না। দল বলছে, এ যাবৎ যে ক’টি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এসেছে তাতে প্রধানমন্ত্রীর দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল ওঠেনি। কিন্তু কয়লা কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীই যেন বিচারবিভাগের মূল লক্ষ্য। এই নিয়ে প্রাক্তন কয়লাসচিব পারেখও জল্পনায় ইন্ধন দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তাঁকে যদি সিবিআই ষড়যন্ত্রী বলে, তা হলে সেই তালিকায় প্রথম নামটি হওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর।
পারেখের বক্তব্য সামনে আসার পরে আসরে নামতে বাধ্য হয় পিএমও। তারা বলে, হিন্দালকোকে কয়লাখনির দেওয়ার পিছনে কোনও অনিয়ম হয়নি। পাশাপাশি শিল্পমহলের আস্থা বজায় রাখতে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম নিজে কুমারমঙ্গলমের সঙ্গে কথা বলেন।
দিল্লির রাজনীতিবিদেরা বলছেন, এ ভাবে এক দিকে যেমন শিল্পমহলকে কেন্দ্র বোঝানোর চেষ্টা করছে, তাদের সঙ্গেই রয়েছে দিল্লি। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপর থেকে অভিযোগের ছায়া সরানোরও চেষ্টা করা হয়েছে।
কংগ্রেসের তরফে ঘরোয়া ভাবে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় আছে দল। তাদের পক্ষে বিচারবিভাগের সমালোচনা করাও কঠিন। কারণ, কেন্দ্রীয় প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ গণতন্ত্রের দু’টি স্তম্ভ। একটি স্তম্ভ আর একটির সমালোচনা করছে এই ঘটনা বিরল এবং দেশের পক্ষেও ভাল বিজ্ঞাপন নয়। কংগ্রেস নেতারা আরও বলছেন, সাধারণত কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী যোগাযোগ রাখেন সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচারবিভাগের সঙ্গে। হংসরাজ ভরদ্বাজের সময় পর্যন্ত এই কাজ সুচারু ভাবেই পালিত হয়েছে। কিন্তু তার পরে অশ্বিনী কুমার বা হালে কপিল সিব্বলের আমলে সেই সূত্রটা অনেক কমজোরি হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে, বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজ্ঞরা, বিশেষ করে প্রশান্ত ভূষণ বা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো দুঁদে আইনজীবীরা অনেক বেশি নিজেদের প্রভাব খাটাতে সক্ষম। সে কারণে আরও প্যাঁচে পড়ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন টানাটানি শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নিয়েও।
অন্য একটি তরফে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যখন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে কাজ করছিল, তখন বিরোধীরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলতেন। এখন সেই সিবিআই যে স্পষ্ট করে তথ্যপ্রমাণের কথা না বলেই কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে, তখন প্রশ্ন তুলছেন না কেন বিরোধীরা?
বিরোধীরা অবশ্য এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই কয়লা দুর্নীতিতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি সাংসদ প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “আমরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, সিবিআই এর পর কাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে।” কংগ্রেসও বুঝতে পারছে লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই কয়লা কেলেঙ্কারিকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের আক্রমণ বাড়বে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “ভারতের ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, প্রশাসনিক কর্তৃত্ব দুর্বল হলেই বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.