নিজেদের ব্যাঙ্কেরই এক এটিএম কাউন্টারে হঠাৎ উর্দিধারী নিরাপত্তারক্ষী দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক কর্তা। চোখের ভুল নয়তো? কারণ এমন রক্ষী তো কস্মিনকালেও মোতায়েন করেননি ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। তা হলে? জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝলেন, কিছু গণ্ডগোল রয়েছে। সটান পুলিশের দ্বারস্থ হলেন তিনি।
লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তে এর পরেই উঠে এল অভিনব এক জালিয়াতির কথা। ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এর পরেই পাঁচ জালিয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম পশুপতি সর্দার, অভিষেক শীল, মণীশ অধিকারী, জগনেশ্বর দাস ও নবকুমার সর্দার। চক্রের পাণ্ডা পশুপতি। যাদবপুরে অভিষেকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ও ভুয়ো কাগজপত্র মিলেছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ মঙ্গলবার বলেন, “নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি দেওয়ার নাম করে একটি ভুয়ো এজেন্সি বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিভিন্ন এটিএম-এ তাদের মোতায়েন করছিল। অথচ, বাস্তবে ওই ব্যাঙ্কের তরফে কোনও রক্ষীই নেওয়া হয়নি। সংস্থাটি ৬৬ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাকরির আশ্বাস দেয়। এমন ২২ জন যুবককে কয়েকটি এটিএম কাউন্টারে কাজে লাগানো হয়।” |
পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতার বিভিন্ন মেট্রো স্টেশন লাগোয়া এটিএম কাউন্টারে চাকরি দেওয়ার নাম করে যুবকদের কাজে লাগিয়েছিল ভুয়ো সংস্থাটি। ওই এটিএমগুলিতে এমনিতে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না। কয়েকটি এটিএমে সিসিটিভি-র মাধ্যমেই চলে নজরদারি। রক্ষীবিহীন এটিএমগুলিকেই চিহ্নিত করে প্রতারণার ছক কষা হয় বলে জানতে পেরেছেন লালবাজারের কর্তারা। পুজোর ঠিক আগে চাকরির আশ্বাস দিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “চাকরির টোপ দেখিয়ে কম-বেশি ৭-৮ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। যুবকদের মাসে ৭-৮ হাজার টাকা মাইনের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। চাকরির জন্য মরিয়া হয়ে কয়েক হাজার টাকা জোগাড় করে প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন নিম্নবিত্ত ঘরের যুবকেরা।”
পুলিশ জানায়, পুজোর সময়ে ব্যাঙ্কের এটিএমগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না দেখতে গিয়েই এক ব্যাঙ্ককর্তা টের পান এই ‘নিরাপত্তারক্ষী’দের অস্তিত্ব। তিনিই হেয়ার স্ট্রিট থানায় সব জানান। পুজোর মধ্যেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, কী ভাবে ওই ফাঁকা এটিএম কাউন্টারগুলিকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে লোক ঠকানো চলছে। প্রতারকদের ‘শিকার’ যুবকদের সঙ্গে কথা বলেই পরিষ্কার হয় চক্রটিতে কারা রয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এতদিন মুখ খোলেনি।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে জগনেশ্বর ও নবকুমার জামিনে ছাড়া পেয়েছে। বাকিদের আদালতে তোলা হলে মঙ্গলবার তাদের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।
|