ছ’মাসের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হচ্ছেন রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী। এক সময় তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেছেন। মঙ্গলবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ কথা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য পুজোর আগে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর ইস্তফাপত্র আচার্য গ্রহণ করেছেন বলে এ দিন ব্রাত্যবাবু জানান।
আইআইটি-খড়্গপুরের অধ্যাপকের পদ থেকে শৌভিকবাবু যাদবপুরের উপাচার্য পদে যোগ দেন গত বছর। চার বছরের মেয়াদকালের ১৩ মাস কাটতেই অব্যাহতি চেয়ে আচার্য-রাজ্যপালের কাছে চিঠি দেন তিনি। মঙ্গলবার শৌভিকবাবু বলেন, “সততার সঙ্গে কাজ করতে আমার কিছু সমস্যা হচ্ছিল। কারণ, এমন কিছু নিয়মকানুন আছে যা সব সময় মেনে নেওয়া যায় না। অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। সেগুলো থেকেই গেল।” পরিস্থিতির চাপেই যে তাঁকে চলে যেতে হচ্ছে, শৌভিকবাবুর এ দিনের মন্তব্যে তা স্পষ্ট। যদিও বিদায়ী উপাচার্য এই নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যায় যাননি। সততা নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে শৌভিকবাবু যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি ব্রাত্যবাবুও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, শৌভিকবাবু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পণ্ডিত মানুষ সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে খুব দক্ষ ছিলেন না। একাধিক বিষয়ে কিছুটা ধৈর্য ও কৌশল করে চললে সমস্যার সমাধান হতে পারত। কিন্তু শৌভিকবাবু সেটা পারেননি বলে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। আচার্য তথা রাজ্যপালও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত।
যদিও তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে মঙ্গলবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সদস্যেরা। পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার আবেদন জানিয়ে আচার্য-রাজ্যপালের কাছেও চিঠি পাঠান তাঁরা। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই সদর্থক সাড়া মেলেনি।
এমনিতে বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বশাসিত সংস্থা। রাজ্যপাল তার আচার্য। সে ক্ষেত্রে শৌভিকবাবুর ইস্তফার ব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা দফতর কিংবা শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা কী? আইন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুবই কম। শৌভিকবাবুকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকাই ছিল না। কারণ, যে সার্চ কমিটি শৌভিকবাবুর নাম প্রস্তাব করেছিল, তাতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, আচার্য-রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মনোনীত তিন সদস্য। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “যে সার্চ কমিটি শৌভিকবাবুর নাম প্রস্তাব করেছিল, তাতে রাজ্য সরকারের মনোনীত কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। কাজেই সরকারের কোনও পছন্দ থাকা, না-থাকার প্রশ্ন ওঠে না।” যদিও এর পরে আইন বদলিয়ে উপাচার্য বাছাইয়ের সার্চ কমিটিতে ইউজিসি-র প্রতিনিধির জায়গায় রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্য রাখার নিয়ম চালু হয়েছে। তাই যাদবপুরের পরবর্তী স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকছে।
অস্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য সর্বদাই শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা থাকে। রাজ্যপালের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনা সাপেক্ষেই বেছে নেওয়া হয় অস্থায়ী উপাচার্যকে। ব্রাত্যবাবু এ দিন রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে বলেন, “আগামী ছ’মাসের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হচ্ছেন উচ্চশিক্ষা সংসদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান অভিজিৎ চক্রবর্তী। উনি আগে ওই দায়িত্ব সামলেছেন, তাই ওঁকেই ফিরিয়ে আনা হল। সংসদের দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য হয়নি এখনও।”
শৌভিকবাবুর ঠিক আগেই যাদবপুরের উপাচার্য ছিলেন অভিজিৎবাবু। সে বারও তিনি অস্থায়ী ভাবেই নিযুক্ত হয়েছিলেন। এর পরে স্থায়ী উপাচার্য খুঁজতে সার্চ কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, অভিজিৎবাবুকেই উপাচার্য হিসেবে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু সার্চ কমিটির বাছাই তালিকায় তাঁর নাম ছিল না বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। সার্চ কমিটির সুপারিশ করা তালিকা থেকে শৌভিকবাবুকে বেছে নেন রাজ্যপাল।
|