পদত্যাগ, যাদবপুরই ছাড়বেন উপাচার্য শৌভিক
‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শৌভিক ভট্টাচার্য। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, পুজোর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। রাজ্যপাল তা গ্রহণ না-করে এত দিন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু শৌভিকবাবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগপত্র উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য সোমবার বলেছেন, এ প্রসঙ্গে তিনি এখনও কিছু জানেন না।

উপাচার্য
শৌভিক ভট্টাচার্য।
তবে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখালেও একান্ত পরিচিতদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন শৌভিকবাবু। ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উচ্ছৃঙ্খলতা এবং তা ঘিরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সহ্যের বাইরে চলে যাওয়াতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। যদিও সরকারি ভাবে শৌভিকবাবু এ দিন বলেন, “গত তেরো মাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণেই ইস্তফা। সরকার আমাকে ছেড়ে দিলে খড়্গপুর আইআইটি-তে ফিরে যাব।”
এ দিকে সরকারি সূত্রের খবর, ইস্তফা পেশের পরে যাদবপুরের ‘অব্যবস্থা’ সম্পর্কে রাজ্যপালকে বিস্তারিত ভাবে অবহিত করেছেন উপাচার্য। রাজ্যপালকে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, অনেক আশা নিয়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ফেরাতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক প্রতিটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে ভাবে রাজনীতিকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থী। আর এর ফলেই ক্যাম্পাসের অশান্তি দূর করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তাঁর মনে হয়েছে। আচার্যকে তিনি বলেছেন, এ অবস্থায় উপাচার্য পদে থাকতে হলে মূল্যবোধ ও নীতির সঙ্গে অহরহ আপস করে চলতে হবে, যা তিনি চান না। তাই তিনি যাদবপুর ছেড়ে চলে যেতে চান।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থির ছিল। তা তুঙ্গে ওঠে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। সে দিন ছাত্রেরা উপাচার্যকে ঘেরাও করেন। র‌্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের শাস্তি মকুবের দাবিতে সে দিন থেকে ৫০ ঘণ্টা উপাচার্য-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের ঘেরাও করে রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। শৌভিকবাবু সেই অনৈতিক দাবি মানেননি। রাজ্যপালও বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের অনমনীয় মনোভাবের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু ওই ঘটনার পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেন উপাচার্য। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যপাল বারবার তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও শৌভিকবাবু রাজি হননি। ফলে রাজভবন প্রথামাফিক ইস্তফা গ্রহণ করে পরবর্তী উপাচার্য নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ করতে উচ্চশিক্ষা দফতরকে বার্তা দিয়েছে। সরকার কী বলছে?
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আচার্য ইস্তফা গ্রহণ করে দফতরে পাঠিয়ে দিলে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।” অতীতে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও তা-ই হয়েছে। তবে যত দিন না নতুন সার্চ কমিটি উপাচার্য বাছাই করে দিচ্ছে, তত দিন শৌভিকবাবুকেই যাদবপুরের উপাচার্যের দায়িত্ব সামলাতে হবে। পরিস্থিতি বিচারে অবশ্য কাউকে ‘অস্থায়ী উপাচার্য’ হিসেবেও নিয়োগ করতে পারে উচ্চশিক্ষা দফতর।
যাদবপুরের পূর্ববর্তী স্থায়ী উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষের মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০১২-র ১৪ এপ্রিল। কিন্তু তার আগে উচ্চশিক্ষা দফতর নতুন উপাচার্য নির্বাচন করে উঠতে পারেনি।
ফলে প্রদীপনারায়ণবাবু যাওয়ার পরে অস্থায়ী ভাবে বেসু-র অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তীকে যাদবপুরের উপাচার্যের পদে বসানো হয়। ইতিমধ্যে তিন শিক্ষাবিদ গোবর্ধন মেটা, এম আনন্দকৃষ্ণণ, শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটিকে নতুন উপাচার্য বাছাইয়ের ভার দেওয়া হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১২-র জুলাইয়ে যাদবপুরের দায়িত্ব নেন শৌভিকবাবু, যিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত এখানেই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে মার্কিন মুলুকে ওহাইয়ো-র সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস, টেক্সাস এঅ্যান্ডএম থেকে পিএইচডি। ১৯৯১-এ দেশে ফিরে শৌভিকবাবু খড়্গপুর আইআইটি-তে যোগ দেন। ২১ বছর সেখানেই অধ্যাপনা করেছেন। মাঝে দু’বছর শুধু ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শৌভিকবাবুর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের খবর, খড়্গপুর আইআইটি-তে তিনি ছাত্র-বিষয়ক ডিন ছিলেন তিন বছর। আশা করেছিলেন, যাদবপুরে এসেও ছাত্র-বিক্ষোভ বা রাজনীতি সামলে পঠনপাঠনের যোগ্য পরিবেশ তৈরি করবেন। “কিন্তু যাদবপুর আর খড়্গপুর যে এক নয়, সেটা এ বার বোধহয় উনি বুঝতে পেরেছেন।” আক্ষেপ তাঁর বন্ধুস্থানীয় এক অধ্যাপকের।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.