চৌত্রিশ লাইনের একটি কবিতা। যার প্রতিটি ছত্র, শব্দ থেকে চুঁইয়ে পড়ছে অগাধ ভালবাসা, বিশ্বাস, প্রেরণা। লেখিকা সামান্থা লিউথওয়েইট। দুনিয়া অবশ্য তাঁকে চেনে ‘হোয়াইট উইডো’ নামে। সন্ত্রাসবাদের দুনিয়ায় তাঁর ‘আদর্শ’ ওসামা বিন লাদেনের উদ্দেশে ক’বছর আগে কবিতাটি লিখেছিলেন সামান্থা।
নাম দিয়েছিলেন ‘ওড টু ওসামা’। সম্প্রতি সামান্থার ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার হওয়া বহু তথ্যের মধ্যে কবিতাটির খোঁজ পেয়েছেন কেনিয়ার গোয়েন্দারা। পুলিশের হাত থেকে পালানোর আগে ল্যাপটপটি নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন সামান্থা। কিন্তু পারেননি। গোয়েন্দামহলের দাবি, ওসামা-নিধনের অল্প ক’দিনের মধ্যেই কবিতাটি লিখেছিলেন সামান্থা। প্রথম চার লাইনে গুরু ‘ওসামা’র প্রতি নিজের সমস্ত আনুগত্য, বিশ্বাস এবং প্রেম উজাড় করে দিয়েছেন সামান্থা। লিখেছেন, “ওহ শেখ ওসামা মাই ফাদার, মাই ব্রাদার, মাই লাভ ফর ইউ ইজ লাইক নো আদার।” গুরুর ব্যাপারে এতটাই শ্রদ্ধাশীল নাইরোবির ওয়েস্টগেট কাণ্ডের এই চক্রী, যে বাবা-ভাই সব রূপেই তিনি গুরুর ব্যাপারে নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু তার পরেই ফুটে উঠেছে এক রাশ হতাশা। সামান্থার ভাবনায়, ওসামাকে হারিয়ে কার্যত অভিভাবকহীন কিছু মানুষ। পরবর্তী ছত্রে আবার সেই মানুষদেরই স্বাবলম্বী হতে আহ্বান জানিয়েছেন ২৯ বছরের এই জঙ্গিনেত্রী। সব মিলিয়ে ‘সন্ত্রাস-প্রেমের’ কাঁচা কাব্য হয়ে উঠেছে ‘ওড টু ওসামা’।
তবে এই প্রথম নয়। আগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক-গ্রেনেডে অভ্যস্ত আল-সাহবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর এই ফেরার নেত্রী এর আগেও কলমের জোর কাজে লাগাতে চেয়েছেন। ওয়েস্টগেট মলে হামলার পরই তাঁর সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছিল সেনা ও গোয়েন্দামহল। আর তখনই উদ্ধার হয় ল্যাপটপ, একটি ডায়েরি ও ছবি। সে ডায়েরিতে সন্ত্রাসবাদের দর্শন নিয়ে রীতিমতো গম্ভীর আলোচনা করেছেন সামান্থা। জানিয়েছেন, নিহত জঙ্গি স্বামীর কথা। তাঁর চার নাবালক সন্তানও যে স্বামীর পথেই হাঁটতে চায়, সে কথা জানতে পেরে যারপরনাই আহ্লাদিত তিনি, এ কথাও লিখেছেন ডায়েরিতে।
অর্থাৎ প্রেম-ভালবাসা-ভক্তি-স্নেহ, সবই রয়েছে ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকার এই প্রথম সারির দুর্ধর্ষ মহিলা জঙ্গির।
সবটারই কেন্দ্রে অবশ্য ধ্বংসোন্মুখ সন্ত্রাসবাদী দর্শন।
|