ন’পাতার একটা পাণ্ডুলিপি। অসম্পূর্ণ। কিন্তু সেই অল্প পরিসরেই গুছিয়ে লেখা রয়েছে সন্ত্রাসবাদের মূল দর্শন। লেখিকা সামান্থা লিউথওয়েইট। নাইরোবির ওয়েস্টগেট মল কাণ্ডের পর দুনিয়া যাঁকে চেনে ‘হোয়াইট-উইডো’ নামে। ইন্টারপোলের তৎপরতা সত্ত্বেও তিনি অধরা। সম্প্রতি কেনিয়ার একটি ‘সেফ হাউস’-এ তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁর লেখা বইয়ের অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপিটি হাতে এসেছে সেনার।
আর তা থেকে পরিষ্কার, কী ভাবে নিজের চার সন্তানকেও সন্ত্রাসবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সামান্থা। পাণ্ডুলিপির তথ্য অনুসারে, ২০০২ সালে লন্ডনের জেরমাইন লিন্ডসে ওরফে জামালের সঙ্গে বিয়ে হয় সামান্থার। জন্ম হয় প্রথম সন্তান আবদুল্লার। দ্বিতীয় সন্তান রুকাইয়া যখন সামান্থার গর্ভে, তখন লন্ডনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেন জামাল। তাতে মৃত্যু হয় ২৬ জনের। আশ্চর্যজনক ভাবে, প্রথম দিকে স্বামীর সিদ্ধান্তকে দুষেছিলেন সামান্থা। কারণ, তার পরই গোপন আস্তানায় লুকিয়ে থাকার কষ্ট ভোগ করতে হয় আসন্নপ্রসবাকে। কিন্তু পাণ্ডুলিপিতে সে স্বামীরই ভূয়সী প্রশংসা। সামান্থার পাণ্ডুলিপিতে জামাল সম্মানিত ‘মুজাহিদ’। তাঁর লেখায়, “বিয়ের আগে আমি এ রকমই স্বামী চেয়েছিলাম। যিনি জেহাদের জন্য নিজের সর্বস্ব দেবেন। তাই পেয়েছি।” স্বামীর ‘দর্শনে’ এতটাই মুগ্ধ ছিলেন তিনি, যে দুই ছেলেমেয়ের মধ্যনাম রেখেছেন ‘শাহিদ’ এবং ‘শাহিদা’। তাঁদের ইতিমধ্যেই দিতে শুরু করেছেন জেহাদের পাঠও।
একই সঙ্গে প্রত্যয়ী তিনি, যে বা যাঁরা বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের নন, তাঁদের শেষ করাই পুণ্য এবং সে সম্প্রদায়ের মানুষের অবশ্যকর্তব্য। মানুষকে জেহাদের পথে উজ্জীবিত করতে ধর্মগ্রন্থের অংশও উদ্ধৃত করেছেন তিনি। এমনকী, পাণ্ডুলিপির দু’টি অংশে শিক্ষানবিশ সন্ত্রাসবাদীদের জন্য প্রাথমিক পাঠও লিখেছেন তিনি।
কিন্তু লেখা হয়নি বহু কিছু। কী লিখবেন, তারও একটা তালিকা তৈরি করেছেন সামান্থা। সে তালিকাও হাতে এসেছে সেনার হাতে। মিলেছে কিছু একে-৪৭ কার্তুজের খোল। আর সামান্থার চার ছেলেমেয়ের ছবি। ছোট দু’জন দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী হাবিব সালে ঘানির সন্তান। আপাতত এই চার সন্তানকে নিয়েই ফেরার বছর উনত্রিশের হোয়াইট-উইডো। নাইরোবির ঘটনা ছাড়াও মোম্বাসার একটি রিসর্টে গ্রেনেড হানার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। |