বরফ কি গলছে?
কোন সরকারের অধীনে বাংলাদেশের নির্বাচন হবে তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষ দু’টি আলাদা প্রস্তাব দেওয়ায় অচলাবস্থা কাটার ইঙ্গিত পাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে বলছেন, এই প্রস্তাব দু’টি এতটাই পরস্পর-বিরোধী যে, এ থেকে কোনও ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার আশা করাটা বৃথা। কিন্তু দু’পক্ষই মানছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার এই পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত একটা আলোচনা প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রস্তাবে জানিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। সব দল এই সরকারে তাদের মনোনীত প্রতিনিধি পাঠাক যারা গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নজরদারি করবে। তবে ভোট হোক নির্বাচন কমিশনের অধীনেই। দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব দেওয়ার পরে লক্ষ্যনীয় ভাবে তা খারিজ করে না দিয়ে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া পাল্টা আর একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তাতে সর্বজনগ্রাহ্য কোনও অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে মাথায় রেখে ১৯৯৬ ও ২০০১-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কয়েক জন প্রতিনিধিকে নিয়ে ১১ সদস্যের একটি অর্ন্তবর্তী সরকার গড়ার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার সরকারের কাছে লিখিত ভাবে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিএনপি।
গত চার দফায় বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু ২০০৬-এ আগের বিএনপি-জামাতে ইসলামির জোট সরকারের মেয়াদ ফুরোনোর পর তত্বাবধায়ক সরকারই সেনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে। হাসিনা-খালেদা-সহ প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকেই জেলে পোরা হয়। তার পরে নির্বাচিত হয়েই আওয়ামি লিগের সরকার সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি বাতিল করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, আর কোনও অনির্বাচিত সরকার যাতে বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হল। ভারত বা আমেরিকার মতো দেশে সরকারকে রেখেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যেমন নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও তাই হবে। |
কিন্তু খালেদা সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামি লিগকে সরকারে রেখে ভোট হলে তারা অংশ নেবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ডাকও দেয় বিএনপি। শুরু হয় হরতাল। ২৫ অক্টোবর বিএনপি রাজধানী ঢাকায় সশস্ত্র সমাবেশের ডাক দেওয়ায় অশান্তির আশঙ্কা জোরদার হয়। এই পরিস্থিতিতে জোটসঙ্গী হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে সুর নরম করেন হাসিনা। প্রস্তাব দেন সর্বদলীয় সরকারের। পরে বিএনপি-ও তাদের পাল্টা প্রস্তাবটি দেয়।
সরকারকে প্রস্তাবটি পাঠানোর পরে এ দিন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, নাটকীয় ভাবে সেই সময়েই তাঁকে ফোন করে আলোচনার প্রস্তাবটি দেন আওয়ামি লিগের মুখপাত্র আশরাফুল ইসলাম। এত ক্ষণ সরকারকে তুলোধোনা করা বিএনপি নেতার সুর বদলায়। তিনি ঘোষণা করেন আলোচনা শুরু হচ্ছে।
ঢাকায় যখন এই নাটক চলছে, দিনাজপুর সফরে গিয়ে খালেদার প্রস্তাবকে তখন ‘অসার ও অতীতমুখী’ বলে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও খালেদার প্রস্তাবকে ‘দলবাজির সরকার’ বলে বর্ণনা করে জানিয়েছেন, এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু কালেদার প্রস্তাব নাকচ করেননি হাসিনা। বরং আলোচনার ডাকই দিয়েছে সরকার। বিএনপি তাতে সাড়া দেওয়ায় আশার আলো দেখছেন মানুষ। তবে ২৫ তারিখের কর্মসূচি বাতিল করেনি বিএনপি। তাই তাঁদের আশার মধ্যে রয়েছে শঙ্কার ছায়াও।
|