দৃশ্য এক: একটু বৃষ্টিতেই দুই দলের জার্সিগুলি কাদায় মাখামাখি। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে উঠে পেনাল্টি বক্সে গোলকিপারকে কাটিয়ে ফাঁকা গোলে বল গোল ঠেললেন ফুটবলার। নিশ্চিত গোল। কিন্তু গোললাইনের সামনে জমে যাওয়া কাদায় আটকে গেল বল।
দৃশ্য দুই: খটখটে রোদ। মাঠ একটাই শক্ত হয়ে গিয়েছে সামান্য ট্যাকেলেই চোট পাচ্ছেন ফুটবলাররা।
দৃশ্য তিন: খেলা শেষের আগে ও পরে মাঠের ধারে অথবা স্টেডিয়ামের নীচেই বিশ্রাম নিচ্ছেন ফুটবলাররা। এই ছবিগুলি কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের। কয়েক মাসের মধ্যে হয়তো বদলাতে চলেছে ছবিগুলি। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর কাটতে চলেছে এই স্টেডিয়ামের জমি জট।
কালনা মহকুমায় একমাত্র স্টেডিয়াম হল অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম। স্থানীয় লিগ-সহ বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্ট হয় এই মাঠে। কিন্তু মাঠের হাল দীর্ঘদিন ধরেই বেশ খারাপ। তৈরির পর থেকে বাড়েনি স্টেডিয়ামটির পরিকাঠামো। মাঠের সব দিকে গ্যালারি নেই। মাঠের ধারে নেই কোনও ফেন্সিং। নেই ড্রেসিংরুম। বছর দু’য়েক আগে এই মাঠে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষে এসেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। তখনই তিনি মাঠ ও স্টেডিয়ামের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর আইনি জটিলতায় আটকে গিয়েছিল সংস্কার প্রকল্প। রাজ্য ক্রীড়া দফতর জানিয়ে দেয় মাঠের জমি তাদের হস্তান্তরিত করতে হবে। সমস্যা তৈরি হয় এখানেই।
|
ফের এই দৃশ্যের অপেক্ষায়। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
মহকুমা ক্রীড়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮২ সালে কালনা পুরসভা মাঠের জমি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার হাতে ডিডের মাধ্যমে তুলে দিলেও সরকারি নথিতে জমির মালিক হিসেবে থেকে গিয়েছিল কালনা পুরসভার নাম। নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দেখা যায় অতীতের খাজনা বাবদ প্রায় ৬৪ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। কালনা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে জমির মালিকানা বদল আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই পুরসভার গিফট ডিডটি রেজেস্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি রেজেস্ট্রি পর্ব মেটার পর সেই নথি তুলে দেওয়া হয় মহকুমা শাসকের হাতে। মহকুমা শাসক এটি রাজ্য ক্রীড়া দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। এর ফলে খাজনা না দিয়েই জমির মালিকানা চলে গেল রাজ্য ক্রীড়া দফতরের কাছে।
এর ফলে অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম সংস্কারে আর কোনও বাধা রইল না। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ২.৭৭ একর জমির উপর তৈরি এই স্টেডিয়ামের সংলগ্ন জমিতে দুটি ঘর নির্মাণের জন্য একটি ২০ লক্ষ টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্ত ও রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকে এই মাঠে খেলতে আসে বিভিন্ন দল। তখন সেই দলগুলির থাকার সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা। এছাড়াও মাঠ ও স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনার কথাও ক্রীড়া দফতরকে জানানো হয়েছে। সেখানে রয়েছে মাঠে ফেন্সিং দেওয়া, স্টেডিয়ামের জায়গা বাড়ানো, মাঠে কৃত্রিম ঘাস বসানো, জল নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা ও মাঠে নিয়মিত জল দেওয়ার জলের ব্যবস্থা্ করার কথা।
কালনার মহকুমা শাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “সমস্যা মিটে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ক্রীড়া দফতরে স্টেডিয়াম সংক্রান্ত যাবতীয় নথি পাঠানো হয়েছে।” কালনার বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান বিশ্বজিত্ কুণ্ডুর কথায়, “জমি জট কেটে গিয়েছে। আশা করছি এ বার ক্রীড়া দফতর এই মাঠটিকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নেবে।” স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। কালনা শহরের বাসিন্দা তথা ক্রীড়াপ্রেমী ধীমান দেব বলেন, “মহকুমায় ফুটবলের একমাত্র জায়গা অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়াম। কিন্তু ওই মাঠের যা অবস্থা তাতে ভাল ফুটবল সম্ভব নয়। শুনছি পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে। তবে যত দিন না হচ্ছে বিশ্বাস নেই।”
আশায় বুক বাঁধছে কালনাবাসী। তবে আদৌও কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয়ও থাকছে। উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। |