কর পাওনা ৪০ কোটি, টনক নড়ল পুরসভার
ক্ষমতায় আসার পরে চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর বাজেট পেশের সময়ে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কর আদায় বাড়ানো হবে। সামনের বছর ফের ভোট পুরসভায়। কিন্তু আসানসোল পুরসভায় এখনও ৪০ কোটি টাকা কর আদায় বাকি পড়ে রয়েছে। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রায় ৯৮টি সংস্থার কাছে এই কর পাওনা রয়েছে। তাদের নোটিস পাঠানো হয়েছে।
২০০৯ সালে বামেদের হারিয়ে আসানসোল পুরসভার ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট। তার পর থেকে পুরবোর্ড চার বার বাজেট পেশ করেছে। প্রতি বারই মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, কর আদায়ে গতি আনা হবে। বাকি পড়ে থাকা কর আদায় করা হবে। কিন্তু তার পরেও কয়েক কোটি টাকা কর আদায় হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন মেয়র ও ডেপুটি মেয়র।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপুল এই যে কর পাওনা হয়েছে তার মধ্যে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ভারী শিল্প সংস্থা আছে। সরকারি নানা দফতরও আছে। রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। পুরসভার কর দফতরের মেয়র পারিষদ তথা ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, বেশি টাকা পাওনা রয়েছে এমন ৯৮টি সংস্থার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তাদের নোটিসও পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, একাধিক ব্যক্তির কাছেও কম বেশি তিন লক্ষ টাকা কর বাবদ পাওনা হয়েছে। অমরনাথবাবু বলেন, “আমরা তালিকা ধরে ধরে নোটিস পাঠাচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া না পেলে আইনি ব্যবস্থা নেব।” কেন সময় মতো বকেয়া আদায় হয়নি, সে প্রশ্নে অমরনাথবাবু জানান, এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। তাঁর দাবি, বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময়েও অনেক টাকা আদায় বকেয়া রেখে গিয়েছে। তা তাঁদের সময়েও রয়ে গিয়েছে। পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা বিরোধী নেতা সিপিএমের তাপস রায়ের পাল্টা বক্তব্য, “ওঁরা সব ব্যপারেই আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপান। কিছু টাকা সব সময় বাকি থাকে। আমরা নিয়মিত আদায় করেছি। ওরা পারছে না। তাই এত টাকা বাকি পড়ে আছে। আসলে পুরসভা ঠিক মতো চালানোর দক্ষতাই নেই ওঁদের।”
ডেপুটি মেয়র অমরনাথবাবু আরও জানিয়েছেন, পুরসভার পরিকাঠামো গত কিছু সমস্যার জন্য ২৬ থেকে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ বাসিন্দা এখনও করদাতার তালিকার বাইরে। এই ১২টি ওয়ার্ড ছাড়াও ৪৮, ৪৯, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডেও করদাতার সংখ্যা খুব কম। এই বাসিন্দাদের তালিকাভুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান। তাঁর দাবি, কর আদায়ে পরিকাঠামোর সমস্যা বহু বছরের। তাঁরা ক্ষমতায় এসে অনেকটা রদবদল করেছেন। পুরসভার ইন্ডোর ট্যাক্স কালেকশন বিভাগও সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি মেয়র।
কয়েক মাস পরেই পুরভোট। তার অন্তত দু’মাস আগে যাতে অন্তত পাওনা করের অর্ধেক আদায় হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার কর বিভাগের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ। আর্থিক ভাবে পুর কর্তৃপক্ষ কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, ভোটের আগে তা পুরবাসীকে বোঝানো ও আদায় করা টাকার একাংশ নাগরিক পরিষেবায় কাজে লাগাতেই পুরসভার এই তত্‌পরতা, দাবি তাঁদের।
ক্ষমতায় আসার পরে প্রতি বছর কর আদায়ের ব্যাপারে পুরসভা যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে, তা-ও কোনও বারেই পূরণ হয়নি। প্রথম বছরে পুরসভার বিশেষ বাজেট অধিবেশনে মেয়র কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন সাত কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা। দ্বিতীয় বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা। মেয়র উল্লেখ করেন, সে বার ডিসেম্বর পযর্ন্ত আদায় হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। তৃতীয় বছরেও লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকা। এ বারও তিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব দিয়ে জানান, আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
চতুর্থ বছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয় আট কোটি টাকা। আগামী বছর ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ই জানাবে, কত টাকা কর আদায় হয়েছে। কোনও বছরই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি কেন? মেয়র তাপসবাবুর বক্তব্য, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.