পাহাড়ে বরফ গলল, মমতার সঙ্গে বৈঠক মোর্চা নেতাদের
শীতের মুখেই পাহাড়ে বরফ গলে যেন জল! ঘরে-বাইরে ক্রমাগত চাপ বাড়ায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আগেই রাজ্য সরকারের প্রতি সুর নরম করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড়ে পা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে, সোমবার মোর্চা জানিয়ে দিল, বিধানসভার আগামী অধিবেশনে তারা ট্রেজারি বেঞ্চেই বসতে চায়। সংঘাতের রাস্তা ছেড়ে ফের সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীও। সোমবার নতুন মহাকরণ ‘নবান্ন’ থেকে বেরনোর পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার দার্জিলিং যাওয়াকে জিটিএ স্বাগত জানিয়েছে। আমার সঙ্গে বসতে চেয়েছে। আমি ২৫ তারিখ ওঁদের সঙ্গে বসব।”
জিটিএ-র প্রস্তাবিত প্রধান রমেশ আলে। রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এ বছর জুলাই-অগস্টে দেড় মাস জুড়ে কার্যত টানা বন্ধ ডেকেছিল মোর্চা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ থেকে সরে গিয়ে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের কৌশল নিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। মোর্চার মোকাবিলায় পাহাড়ে জনজীবন সচল রাখতে বন্ধ রুখতে নানা প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি মোর্চা নেতা-সমর্থকদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার করে রাজ্য সরকার। মোর্চা ও রাজ্য সরকারের সম্পর্ক দাঁড়ায় খাদের কিনারায়। তবে শেষ অবধি কেন্দ্রের থেকে সমর্থন না পেয়ে, জনগণের হয়রানি বাড়তে থাকায়, এবং পুলিশ-প্রশাসন ক্রমাগত চাপ বাড়াতে থাকায় মোর্চা সুর নরম করতে বাধ্য হয়। জিটিএ প্রধানের পদে গুরুঙ্গ প্রথমে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা বিনয় তামাঙ্গকে আনার কথা বললেও, পরে বিনয়ের তুলনায় রাজ্য সরকারের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য প্রবীণ নেতা রমেশ আলে-কে জিটিএ-র প্রধান মনোনীত করেন। মমতার পাহাড় সফরকেও স্বাগত জানিয়েছে মোর্চা। পরপর এই সিদ্ধান্তগুলি স্পষ্ট করে দিয়েছে, সমঝোতার পথেই হাঁটছে মোর্চা।
মোর্চা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নরম মনোভাব আঁচ করে ওই সময়ে পাহাড়ে থাকছেন গুরুঙ্গও। এখন তিনি গুয়াহাটিতে রয়েছেন। গত কয়েক দিন শোনা যাচ্ছিল, মমতার সফরের সময়ে বিমল দিল্লি কিংবা অসমে থাকবেন। এ দিন সেই জল্পনা ভেঙে গুরুঙ্গের সফরসঙ্গী রোশন গিরি জানিয়ে দেন, মমতার সফরের দিনগুলিতে বিমল এবং তিনি থাকবেন দার্জিলিঙেই। সব ঠিকঠাক থাকলে ফের গুরুঙ্গ-মমতা বৈঠকও হতে পারে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাজনীতিতে অনেক কিছু সম্ভব। তবে সব কিছুরই একটা সময় আছে।” মোর্চার প্রচারসচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী জানান, তাঁরা বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তো ট্রেজারি বেঞ্চে বসতাম। ফলে, সেখানে আবার বসতে সমস্যা নেই। সব কিছু আইন মেনেই হবে।” তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মোর্চা নেতৃত্ব মৌখিক ভাবে ট্রেজারি বেঞ্চে বসার কথা জানিয়েছেন। ২৫ তারিখের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে জানাবেন তাঁরা।
২২ অক্টোবর থেকে পাঁচ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরের প্রথম দিন শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন তিনি। পর দিন কার্শিয়াংয়ে লেপচাদের সম্মেলনে যোগ দেবেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ দিন জানান, বাকি দু’দিনের মধ্যে ২৪ তারিখ দার্জিলিঙে দলের সভায় এবং ২৬ অক্টোবর মাটিগাড়ায় একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।
গত শীতের শেষে ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙের ম্যাল চৌরাস্তায় এক অনুষ্ঠানে মোর্চা ও তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতির সূত্রপাত হয়। সেই সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে তা থামিয়ে দিতে বিমল গুরুঙ্গদের বাধ্য করান। পরে কেন্দ্র পৃথক তেলঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে মোর্চা সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে নামে।
জুলাইয়ের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাহাড় অচল করে রাখে মোর্চা। পক্ষান্তরে, মুখ্যমন্ত্রীও কঠোর মনোভাব দেখিয়ে পাহাড়ে বন্ধ উপেক্ষা করে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের সভায় যোগ দেন। প্রায় ২৫০০ মোর্চা নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। পাশাপাশি, পাহাড়ে তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী করার উপরেও জোর দেয় তৃণমূল। সব মহকুমায় শাখা গঠনের পরে আগামী ২৪ অক্টোবর পাহাড় তৃণমূলের প্রথম রাজনৈতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দার্জিলিঙে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী। মোর্চার মধ্যেও ভাঙন শুরু হয়। মোর্চার অন্দরের খবর, জিটিএ-র সদস্যদের অনেকেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। বেগতিক দেখে আগের অবস্থান রাতারাতি বদলে ফেলে মুখ্যমন্ত্রীকে ফের পাশে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বিমল গুরুঙ্গরা।
দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর কথা জানানো হয়। জিটিএ-এর অস্থায়ী প্রধান হিসেবে প্রাক্তন কর্নেল রমেশ আলেকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেয় মোর্চা। এমনকী, এ দিনই সেই সিদ্ধান্ত জিটিএ-র সদস্যরা অনুমোদন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে যাওয়ার আগেই জিটিএ কাজকর্ম ফের শুরুও করে দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার থেকে জিটিএ অফিসে মোর্চার জনপ্রতিনিধিরা ফের বসবেন। জিটিএর প্রস্তাবিত অস্থায়ী প্রধান রমেশ আলেও বলেন, “মঙ্গলবার জিটিএর কাজ শুরু হয়ে যাবে। দায়িত্ব নিয়ে আমার প্রথম কাজ হবে জিটিএর যে কর্মীরা গত অগস্ট মাস থেকে পুরো বেতন পাচ্ছেন না, তাদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ করা।” জিটিএর অধীনে থাকা বিভিন্ন দফতরের প্রায় সাড়ে আট হাজার কর্মী রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ফের মোর্চা-তৃণমূল কাছাকাছি আসার বিষয়টি স্পষ্ট পাহাড় তৃণমূলের নেতাদের কাছেও। তৃণমূলের দার্জিলিং পাহাড় শাখার মুখপাত্র বিন্নি শর্মা বলেন, “মোর্চার সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। দু’দলের মধ্যেও যুযুধান সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু পাহাড়ে তৃণমূলকে মজবুত করার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.