বেহাল রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে বিস্তর। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দুরবস্থার কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছেছিল। পুজোর আগেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি সারাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু নির্দেশই সার। রাস্তা রয়ে গিয়েছে সেই আগের অবস্থাতেই।
তবে রাস্তা সারানোর নির্দেশ মেনে কাজ শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এই এক্সপ্রেসওয়েতে থাকা তিনটি টোলপ্লাজার কর্মীরাই। তা-ও খাপছাড়া ভাবে। ব্যারাকপুর থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত জোড়াতালি দিয়ে পিচ ফেলে গর্ত বোজানো হলেও কল্যাণী পর্যন্ত অংশের অধিকাংশ জায়গায় এখনও রয়ে গিয়েছে বড় বড় গর্ত। কোথাও আবার নিয়ম রক্ষা করার মতো আধলা ইট ভেঙে গর্ত ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু পুজোর মধ্যের ভারী বৃষ্টিতে সেই তাপ্পি এখন উধাও। |
ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে পুজোর সময়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি একমুখী করে দেওয়ায় ভারী গাড়ি-সহ অধিকাংশ যানবাহনই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করেছে। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরাও প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। ব্যারাকপুর ও কল্যাণী, দুই শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম রাস্তাও এই এক্সপ্রেসওয়েটি। কিন্তু এখন এমনই অবস্থা যে, স্থানীয় নার্সিংহোমগুলিও অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগী পাঠাতে ভয় পাচ্ছে এই রাস্তা দিয়ে। ব্যারাকপুর দেবপুকুরের এক নার্সিংহোমের মালিক সুজয় নন্দী বলেন, ‘‘রাস্তা খারাপ থাকায় এখান থেকে কল্যাণীর হাসপাতালে কোনও রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠানোই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। পুজোর মধ্যেই ভাঙা রাস্তায় আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স দু’বার খারাপ হয়েছে। ওই রাস্তায় রোগীর শারীরিক অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত দেখলাম না যে, গোটা রাস্তাটি কখনও সারানো হয়েছে।”
টোল আদায় নিয়মিত হলেও কেন রাস্তাটি পাকাপাকি সারানো হয় না? এর উত্তর দিয়েছেন টোল আদায়কারী সংস্থারই এক কর্মী। তাঁর কথায়, নিমতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়েটি সারানোর জন্য বরাত পেয়েছেন আট জন ঠিকাদার। খাপছাড়া ভাবে বিভিন্ন অংশে সাময়িক তাপ্পি পড়েছিল একাধিক ঠিকাদার থাকার জন্যই। ঠিকাদারেরা প্রায় সকলেই শাসক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিজেদের সুবিধামতো মেরামতির কাজ করেন। যদিও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে চার লেন করার কাজ চলছে। পুরো রাস্তাটিই সারানো হচ্ছে। পুজোর সময়ে বৃষ্টির জন্য কাজ আটকে গেলেও কিছু দিনের মধ্যেই তাপ্পি দেওয়া শুরু হবে। কিন্তু সেই তাপ্পি টিকবে কতদিন? তার উত্তর অবশ্য কারও কাছেই নেই। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘পুজোর আগে কেএমডিএ’র কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে রাস্তা সারানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু দায়সারা ভাবে কিছুটা কাজ করার পরে আর ওই রাস্তা সারানো হয়নি। আবার ওঁদের ডাকছি। রাস্তাটি ঠিকমতো সারানো হচ্ছে না বলে প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি।’’
|