প্রশাসনিক বৈঠকে জট কাটার লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছিল। তার পরেও রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজে বাধা দিলেন অনিচ্ছুক জমিদাতাদের একাংশ।
সোমবার নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ এলাকায় জলের পাইপলাইন পাতার জন্য মাটি কাটার কাজ করতে গিয়েছিল ডিভিসি-র বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র সদস্যদের বাধায় কাজ বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হন ঠিকা সংস্থার কর্মীরা। মাটিকাটার যন্ত্রের সামনে রীতিমতো দাঁড়িয়ে পড়েন কমিটির সদস্যেরা। পাশাপাশি তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের ছাইপুকুর (অ্যাশপন্ড) তৈরি এবং কয়লা আনার রেললাইন পাতার কাজেও বাধা পেয়েছে ডিভিসি।
রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র এ দিন বলেন, “প্রশাসনিক বৈঠকের পরে জট কাটার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই মতো ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় বাধায় কাজ ফের বন্ধ হয়ে গেল! পুরো পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা নিখিল মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে হওয়া ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জেলা প্রশাসন এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বৈঠকের রেজোলিউশনে সে-সবের উল্লেখ নেই। ফলে, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু হলে, সেখানে সক্রিয় ভাবেই বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” ডিভিসি এবং প্রশাসন, দু’পক্ষই জানিয়েছে স্থায়ী চাকরি বা বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণের দাবি মানা সম্ভব নয় বলে প্রশাসনিক বৈঠকেই সংগ্রাম কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রঘুনাথপুরে এই নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পে একটি ইউনিট উত্পাদনের মুখে থাকলেও ‘ওয়াটার করিডর’ (প্রকল্পে জল আনার পাইপলাইন) নির্মাণে জমি মালিকদের একাংশের বিরোধিতায় গভীর সঙ্কটে পড়েছে ডিভিসি। রায়বাঁধ এলাকায় ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজ শুরু করেও সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের বারবার বাধায় কাজ থমকে গিয়েছিল। পুজোর আগে সমস্যা মেটাতে প্রকল্পে জমি মলিক ও জমিহারাদের সমস্ত সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসে প্রশাসন এবং ডিভিসি। সেখানে জমিহারাদের একটি সংগঠন আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানালেও ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি। সেই সময়েই কমিটি জানিয়েছিল, তাদের দাবি পূরণের বিষয়ে প্রশাসন ও ডিভিসি লিখিত আশ্বাস না দিলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবে না। এ দিন ঠিক সেটাই হয়েছে। তাদের বাধায় ফের বন্ধ হয়েছে পাইপলাইন বসানোর কাজ। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহকুমাশাসকের দফতরে হওয়া বৈঠকের ‘রেজোলিউলেশন’ (সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত) সম্প্রতি ডিভিসি-র তরফে দেওয়া হয় জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটিকে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, বৈঠকের পরে প্রশাসনকে জানিয়েই সোমবার ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু করতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ফের বাধা এসেছে। মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিসবাবুর কথায়, “এই অবস্থায় প্রকল্প ঘিরে সঙ্কট আরও বাড়ল। পুরো বিষয় জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।” পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার বলেন, “ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু করেও বাধা পাওয়ার বিষয়টি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন। জেলাশাসকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |