ক্লাস ঘর রয়েছে। রয়েছে চক-ডাস্টার, মানচিত্র। আছে ছাত্রছাত্রীও। নেই শুধু শিক্ষক।
এ ভাবেই চলছে পাড়া ব্লকের চুড়মি জুনিয়র হাইস্কুল। বছর দেড়েক আগে এই স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হলেও স্থায়ী শিক্ষক আজও নিয়োগ হয়নি। এত দিন দু’জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পড়াতেন। কিন্তু দুই অতিথি শিক্ষকের বয়স ৬৫ পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের পড়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে আড়াই মাস ধরে ওই স্কুল চলছে শিক্ষকহীন ভাবেই। বন্ধও হয়ে গিয়েছে মিড-ডে মিল। পাড়ার নডিহা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বরূপ দে বলেন “ওই স্কুলের সমস্যার কথা জানি। সেখানে পাঁচ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
কাছাকাছি স্কুল না থাকায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এখানে একটি জুনিয়ার হাইস্কুলের অনুমোদন দেয়। ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে এখানে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল চত্বরেই সর্বশিক্ষা মিশনের ১৩ লক্ষের বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে জুনিয়র হাইস্কুলের ভবন। বর্তমানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি মিলিয়ে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৭। সকলেই চুড়মি ও পাশের চৌকানা গ্রামের বাসিন্দা। |
জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের জুনিয়র হাইস্কুলগুলিতে গোড়ায় অতিথি শিক্ষক হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এতদিন মুক্তিপদ মাহাতো ও শক্তিপদ মাজি নামে স্থানীয় দুই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ওই স্কুলে পড়াতেন। নিয়ম অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সের পরে ওই ধরনের শিক্ষকরা স্কুলে পড়াতে পারবেন না। দু’জনেই জুলাই মাসে ৬৫ বছর উত্তীর্ণ করেন। ফলে তাঁদের স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকেও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। ফলে স্কুল হয়ে পড়েছে শিক্ষক-শূন্য।
তবু কখন নতুন মাস্টারমশাই আসেন, সেই আশায় স্কুলে আসা বন্ধ করেনি ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষক না থাকায় ক্লাস ঘরের বদলে বেশির ভাগ দিনই তারা মাঠে খেলাধুলো করে বাড়ি ফিরে যায়। তবে মাঝে মধ্যে চৌকানা গ্রামের তরুণী রুম্পা সেন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে স্কুলে এসে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। তাঁর কথায় “স্কুলে শিক্ষক নেই। ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন এসে ফিরে যায় দেখে খারাপ লাগত। কয়েকজন অভিভাবকের অনুরোধে সময় পেলে স্কুলে পড়াতে আসছি।” পড়ুয়া বিকাশ রায়, প্রিয়াঙ্কা দে, শম্পা দে, রাহুল মাজিরা বলে, “বেশির ভাগ দিনই স্কুলে এসে ফিরে যেতে হয়। রুম্পা দিদিমণি এলে আমাদের পড়াশোনা হয়।”.
অভিভাবকদের মধ্যে অমিত মাজি, সিরাজ আনসারি, যদুপতি মাজিরা বলেন “এই ভাবে স্কুল চলতে পারে না কি? স্থায়ী শিক্ষক চেয়ে সব মহলেই বার বার আবেদন করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।” তাঁরা জানান, কাছাকাছি নডিহা হাইস্কুল থাকলেও তাও তিন-চার কিলোমিটার দূরে। তাই অতদূরে ছেলেমেয়েদের না পাঠিয়ে এখনও তাঁরা নতুন শিক্ষকের আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বরূপ দে জানান, বিজ্ঞাপন দিয়েও ওই স্কুলের জন্য আপাত ভাবে শিক্ষক পাওয়া যায়নি। তবে আশা করছি স্কুল সার্ভিসের মাধ্যমে এ বার ওই স্কুলে শিক্ষক পাওয়া যাবে।” |