আন্দোলনকারীদের এক পক্ষ সুর নরম করলেও অন্য পক্ষ নিজেদের দাবি থেকে সরল না। ফলে, রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জট পুরোপুরি কাটল না ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে।
রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে বুধবার দীর্ঘ বৈঠক হয়। ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুবজবরণ সরকার, মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা, ডিভিসির মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র, রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্নচন্দ্র বাউরি, এসডিপিও (রঘুনাথপুর) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ জেলা পুলিশ-প্রশাসন এবং ডিভিসি-র পদস্থ কর্তারা। তাঁরা আলোচনা করেন আন্দোলনকারী ‘ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশন’, জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, বৈঠকে সদর্থক আলোচনা হয়েছে। প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু, কবে থেকে থমকে থাকা ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজ ফের শুরু হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারেনি ডিভিসি। ডিভিসি সূত্রের খবর, পুজোর পরে ওয়াটার করিডরের কাজ শুরু করার জন্য তারা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু, প্রশাসন তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। তবে, দেবাশিসবাবু বলেছেন, “প্রকল্পে জট কাটার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
এ দিন প্রথমেই ল্যান্ডলুজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা হয়। স্থায়ী চাকরির দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে ওই কমিটির নেতা চিন্ময় বন্দ্যাপাধ্যায় বলেন, “আমরা শিল্প-বিরোধী নই। কিন্তু, আমাদের সমস্যা নিয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন আলোচনায় বসছিল না বলেই আন্দোলনে গিয়েছিলাম। এ দিন ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ প্রকল্পে কর্মরত জমিহারাদের অপারেশন ও মেনটেন্যান্সের কাজে নিয়োগ নিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আমরা সন্তুষ্ট।” ফলে, মূল প্রকল্পের কাজে তৈরি হওয়া জটিলতা কাটল বলেই মনে করছে প্রশাসন। ‘ওয়াটার করিডর’-এর জট অবশ্য গলার কাঁটা হয়েই রইল ডিভিসি-র। একটি ইউনিট উৎপাদনের মুখে থাকা সত্ত্বেও জলের অভাবে তা কোনও কাজে আসছে না। বৈঠকের পরে জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা নিখিল মণ্ডল, সুধীর মণ্ডলরা বলেন, “প্রকল্পে যাঁরা স্থায়ী চাকরী পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের নিয়োগ করা, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী জমির দাম এবং ঠিকা শ্রমিকের কাজে জমিহারা পরিবারগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব না।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “বৈঠকে কমিটিকে জানানো হয়েছে, প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি বা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। ওঁরা লিখিত প্রতিশ্রুতি বলতে পুরো আলোচনার লিখিত বয়ান চেয়েছেন। আমরা তা দিয়ে দেব।” বিধায়কের দাবি, “যে অনড় মনোভাব নিয়ে জমিহারাদের সংগঠনগুলি চলছিল, আলোচনায় তারা সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরেছে। প্রয়োজনে ফের আলোচনা হবে।” |