কোথাও লালকেল্লা, কোথাও আদিবাসী গ্রাম। বাদ পড়েনি খুদেদের অতি প্রিয় কার্টুন-চরিত্র ছোটা ভীম। আছে কেদারনাথ মন্দিরও। এ বারও দর্শকদের নতুন নতুন থিম উপহার দিতে প্রস্তুত বাঁকুড়ার পুজো কমিটিগুলি। কিন্তু, মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার তাদের মরিয়া চেষ্টায় বাধ সাধছে নাছোড় বৃষ্টি। এক টানা বৃষ্টি মণ্ডপশিল্পীদের কাজের গতিতে যেমন ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, তেমনই বাড়িয়ে দিয়েছে খরচের বহর। তাই পুজোর বাজারে দু-পয়সা লাভের জন্য যাঁরা থিমের কাজ করেন, এখন তাঁদের মাথায় হাত। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদৌ কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুজো কর্মকর্তারা। |
বুধবার পঞ্চমীর দিনেও বৃষ্টির বিরাম নেই। বৃষ্টিতে
ভিজছে বিষ্ণুপুরের একটি মণ্ডপ। ছবি তুলেছেন শুভ্র মিত্র। |
বাঁকুড়ার দশেরবাঁধ সর্বজনীনের থিম এ বার তাসের দেশ। গোটা প্যান্ডেলের বাইরের দিকে ও ঢোকার দরজাতেও থাকছে তাসের কাজ। থার্মোকল কেটে রং দিয়ে ৯-১২ ফুটের বিভিন্ন আকৃতির তাস তৈরি করেছেন মণ্ডপ শিল্পী গৌতম কর্মকার। লাগাতার বৃষ্টির জেরে চতুর্থীর রাতেও তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। বৃষ্টিতে ভিজে ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে তাঁর হাতের অনেক কাজ। প্যান্ডেলের ভিজে কাপড়ে থার্মোকল সাঁটাতে অনেক বেশি পরিমাণে আঠা ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। গৌতমবাবুর কথায়, “আকাশের পরিস্থিতি এ রকম থাকবে জানলে এই ধরনের থিমের কাজ ধরতাম না। পুজোয় কাজ করে লাভ তো হলই না, উল্টে পকেট থেকে টাকা বেরিয়ে গেল!” এই পুজো কমিটির সভাপতি দেবাশিস লাহা বলছেন, “ষষ্ঠীর মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।”
আর এক মণ্ডপশিল্পী গৌর বায়েনের গলাতেও আক্ষেপ ঝরে পড়ছে। তিনি খড়ের কাজ করেন। প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি পুজোর কাজ করছেন। এ বছর বাঁকুড়া শহরের পোয়াবাগান সর্বজনীন ও সিনেমারোড কমরারমাঠ সর্বজনীনের বরাত পেয়েছেন। পোয়াবাগানের থিম ‘খড়ের লালকেল্লা’। সিনেমারোডের ‘আদিবাসী গ্রাম’। |
বাঁকুড়া শহরের মণ্ডপে উঠে এসেছে ছোটা ভীমের ঢোলকপুর। বৃষ্টির জেরে
মণ্ডপগুলির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা। ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
গৌরবাবু বলেন, “বৃষ্টিতে আমার প্রায় তিন কাহন খড় নষ্ট হয়েছে। কাজও দ্রুত করা যাচ্ছে না। তাই শেষ মুহূর্তে কাজ সারতে অনেক বেশি লোক লাগাতে হয়েছে। ফলে, খরচও বেড়েছে।” পোয়াবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎবের উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য মধুসূদন ডাঙরের আক্ষেপ, “এক টানা বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিল্পীরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজটা শেষ করে দিলেও কতটা নিখুঁত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আমাদের।” বাঁকুড়ার কমরারমাঠ সর্বজনীনের থিম এ বার ‘ছোটা ভীম’। ওই পুজো কমিটির সদস্য সুরজিৎ দাস বলেন, “ছোটদের কথা মাথায় রেখেই আমরা থিম করেছি। কিন্তু, এ রকম বৃষ্টি হলে সেই খুদেরাই মণ্ডপে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” লালবাজার সর্বজনীনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাসের কথায়, “আমাদের থিম কেদারনাথ মন্দির। দুর্যোগ না কাটলে সব আয়োজন মাটি হয়ে যাবে।” |