আন্ত্রিক ছড়াল দক্ষিণ বাঁকুড়াতেও। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকার পরে এ বার রাইপুর থানার বামুনগোড়া গ্রামে আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন ওই গ্রামের অন্তত ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে রাইপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। বিভূতি মাহাতো নামের অসুস্থ এক বৃদ্ধকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের ওই গ্রামেই চিকিত্সা চলছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার থেকে গ্রামের কয়েকজনের পেটের গোলমাল হয়। সেই সঙ্গে বমিও শুরু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনকে শনিবার রাইপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামবাসী গণেশ মাহাতো, শুকদেব মাহাতো বলেন, “গ্রামের একটি পুকুরের জল অনেকে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন। তবে নলবাহিত পানীয় জলই পান করা হয়।” বাসিন্দারা জানান, এই গ্রামের অনেকে এখনও শৌচাগার ব্যবহার করেন না। মাঠেঘাটে শৌচকর্ম করতে তাঁরা যান। বৃষ্টিতে ওই নোংরা মিশ্রিত জল পুকুরে নেমে এসেছে বলে তাঁদের ধারণা। সেখান থেকে আন্ত্রিক ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। কারণ ওই জল পান না করলেও জামা-কাপড় কাচা হয়। থালা-বাসনও ধোয়া হয় ওই জলে। ফলে বাসন পত্রে থেকে যাওয়া জীবাণুর সংক্রমণে পেটের গোলমাল হওয়া স্বাভাবিক।
রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় হাঁসদা বলেন, “ওই গ্রামে অনেকে বাড়িতেই এখনও শৌচাগার নেই। সে জন্যই তাঁরা মাঠেঘাটে যাচ্ছেন। আমরা সার্বিক স্বাস্থ্য বিধান প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার নির্মাণের উপর জোর দিচ্ছি।” রবিবার রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস ওই গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি সরজমিন খতিয়ে দেখেন। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের আপাতত পুকুরের জল ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকেই ওই গ্রামে পানীয় জলের একটি ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণেই।” তিনি জানান, ওই গ্রামের পুকুর শীঘ্রই শোধন করা হবে।
শনি ও রবিবার রাইপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কুণাল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক চিকিত্সক দল ওই গ্রামে যায়। জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ ২ দেবাশিস রায় বলেন, “ওই গ্রামে ৩৯ জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রাথমিক খবর পেয়ে তাঁদের দ্রুত চিকিতসা করা হয়। অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। বাকিদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও গ্রামে চিকিত্সা করা হয়। স্বাস্থ্য কর্মীরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছেন।” তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই গ্রামে গিয়ে হ্যালোজেন ট্যাবলেট বিলি করে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছেন। বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে আক্রান্তদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই গ্রামের পুকুর ও নলবাহিত পানীয় জল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠানো হবে। কোথা থেকে ওই রোগ ছড়িয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |