নামেই ‘নির্মল গ্রাম’, ‘সজলধারা’
মাঠেই প্রাতঃকৃত্য, নলকূপও নেই, ছড়াচ্ছে ডায়েরিয়া
‘নির্মল গ্রাম’ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৯৫ শতাংশ বাড়িতেই নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। পানীয় জলের অর্ধেক নলকূপই অকেজো। অভিযোগ, এর ফলেই গত সাত দিনে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাউলি গ্রামের ৬১ জন বাসিন্দা। মারা গিয়েছেন মিদুল রবিদাস (২৬) নামে এক মহিলা। সাগরদিঘি ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৭ জন।
এ চিত্র শুধু মুর্শিদাবাদেরই নয়। বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর-সহ নানা জেলাতে গত কয়েক মাস ধরে আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার থেকে বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লকের বামুনগোড়া গ্রামে আন্ত্রিক ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৪০। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন রাইপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি রয়েছে। বীরভূমেও আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে। গড়বেতা-৩ ব্লকের রসকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরেও জমা জল নামতেই প্রকোপ দেখা দিয়েছে ডায়েরিয়ার। ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রবিবার দুখী কিস্কু (২৬) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তিনি নারায়ণপুরের বাসিন্দা। সেখানে এখনও ডায়েরিয়া আক্রান্ত ৬ জনের চিকিৎসা চলছে। অথচ এলাকায় সজলধারা প্রকল্প রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নলকূপ চালু হয়নি। নিবিড় স্বাস্থ্য বিধান কর্মসূচিতে সব বাড়িতে শৌচাগারও গড়ে ওঠেনি।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির পাউলি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের ৯৫ শতাংশ বাড়িতে ব্যবস্থা নেই কোনও শৌচাগারের। সকলেই প্রাতঃকৃত্য সারেন মাঠ বা পুকুর পাড়ে। সেই বর্জ্য পদার্থ মেশে পুকুরের জলে। সেই জলই বাসন ধোয়া থেকে রান্নার কাজেও ব্যবহার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এর ফলেই এলাকায় ছড়িয়েছে ডায়েরিয়া। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিশ্বজিৎ দে বলেন, “গত তিন দিন ধরে চিকিৎসক-সহ স্বাস্থাকর্মীরা গ্রামে রয়েছেন। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আক্রান্তের অবস্থা গুরুতর দেখলেই হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য কাউকে কোনও খরচ করতে হবে না।” তাঁর মতে, “গ্রামের পুকুরের জল বাসন ধোয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী সেই জলে রান্নাও হচ্ছে। এর ফলেই সংক্রমণ।”
সাগরদিঘি ব্লকের বিডিও দেবব্রত সরকার বলেন, “আজ, সোমবার থেকে গ্রামের যে যে বাড়িতে শৌচাগার নেই তার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতকে। শৌচাগার গড়তে পরিবার পিছু ৯০০ টাকা করে জমা দেবেন গ্রামবাসীরা। সরকার ৯১০০ টাকা দিয়ে শৌচাগার করে দেবে। প্রতি বাড়িতে শৌচাগার হলে ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা এড়ানো যাবে।” কিন্তু দিনমজুর গ্রামবাসীরা ৯০০ টাকার ব্যবস্থা করবেন কী করে?
তার উত্তরে বিডিও বলেন, “এক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে কাজে লাগানো হবে। বেশিরভাগ গ্রামবাসীরই জবকার্ড রয়েছে। তাই নিজের বাড়ির শৌচাগারের গর্ত খুঁড়বেন তাঁরাই। ফলে তাঁদের মজুরি হিসেবে মিলবে ১৫১০ টাকা। তা হলে টাকা দেওয়ার সমস্যার থাকবে না।”
রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “গ্রামবাসীদের আপাতত পুকুরের জল ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে। শীঘ্রই পুকুরের জল শোধন করা হবে।”
রবিবার বীরভূমের মহামারী প্রতিরোধক সেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) শুভব্রত ঘোষ। তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকার পুকুর, অন্য জলাশ্রয়, নলকূপের জল পরিশোধন করা হচ্ছে। ওষুধ এবং স্যালাইনও সরবরাহ করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.