স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে এক জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। শনিবার রাত আড়াইটা নাগাদ শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানার উত্তরায়ণ উপনগরীর মধ্যে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ঘটনাটি ঘটেছে। রবিবার সকালে তরুণীর বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতেই নার্সিংহোমে গিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেখানে গিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, মাটিগাড়া নকশালবাড়ি কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, শিলিগুড়ি পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল সহ অনেকেই অভিযুক্ত চিকিৎসকের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন। ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতা সৌমিত্র কুন্ডু, মনোজ ভার্মা, কংগ্রেস নেতা সৌরভ ভট্টাচার্য। পরিস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি ওই চিকিৎসককে ‘সাসপেন্ড’ করার কথা ঘোষণা করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোমের তরফে রুমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পেয়ে চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্তের জন্য ৭ জনের কমিটি হয়েছে। রিপোর্ট পেলে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।” পাশাপাশি, পুলিশকেও তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।” |
নার্সিংহোমে কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
তবে তরুণীর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, লিখিত অভিযোগপত্র দিতে চাইলে তা কোন থানায় জমা নেওয়া হবে তা নিয়ে গড়িমসি চলে। অভিযোগ, মাটিগাড়া থানার পক্ষ থেকে শিলিগুড়ি মহিলা থানায় তা দিতে বলা হয়। পক্ষান্তরে, মহিলা থানার পক্ষ থেকে মাটিগাড়ায় জমা দিতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত সিপিএম কাউন্সিলর কমলবাবু পুলিশ কর্তৃপক্ষের জানালে মাটিগাড়া থানা অভিযোগ জমা নেয়। যদিও পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “অভিযোগ নেওয়া কোনও গড়িমসির প্রশ্ন নেই। অভিযোগ যে কোনও জায়গায় দেওয়া যায়। যে হেতু শ্লীলতাহানির অভিযোগ তাই মহিলা থানার কথা বলা হয়। যাতে অভিযোগের খুঁটিনাটি বিবরণ দিতে অস্বস্তি না হয়।” পাশাপাশি, তিনি জানান, তদন্ত করে পদক্ষেপ করা হবে। নার্সিংহোম সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা ওই রোগিণী শনিবার রাত দুটো নাগাদ শ্বাসকষ্ট ও বমির কারণে নার্সিংহোমে যান। তাঁকে ভর্তি করানো হয়। আনাইটে নাগাদ তাঁকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজন প্রধান দেখেন। তরুণীর অভিযোগ, ওই সময়ে ঘর থেকে সকলকে বার করে সুজন প্রধান স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। সকালে তিনি বিষয়টি অন্য এক চিকিৎসককে জানান। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তদন্তে নামেন। ইতিমধ্যে বাড়ির লোকজন গিয়ে সব জানতে পেরে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিতে সরব হন।
সিপিএম ২ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রুয়াল বলেন, “ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি। সোমবার পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেব। চিকিৎসককে গ্রেফতার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।” চিকিৎসক সুজনবাবু এ দিন বলেন, “চিকিৎসা শাস্ত্রের নিয়ম মেনেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। তদন্তে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” রোগিণীর বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে ঘরে কোনও মহিলা সহায়ককে রাখা হয়নি। এদিন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে দু’জন সহায়িকাকে রাখা হয়ে থাকে।” |