চিকিৎসার জন্য বহির্বিভাগে আর সকলের সঙ্গে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করা নয়। ষাটোর্ধ্বদের জন্য এক নতুন পদক্ষেপ করেছেন চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বন্দোবস্ত করা হয়েছে একটি আলাদা ঘরের। সেখানেই বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কার্ড। তা নিয়ে তাঁরা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে সহজেই নানা শারীরিক পরীক্ষা করাচ্ছেন।
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল আসলে হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল। প্রতিদিনই বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য এখানে রোগীর চাপ থাকে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাবে, এখানে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে সাতশো রোগী আসেন। তার মধ্যে বৃদ্ধবৃদ্ধার সংখ্যা একশোরও বেশি। এত দিন তাঁদের জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সকলের সঙ্গেই তাঁরা চিকিৎসককে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করতেন। এ জন্য সময় লাগত বিস্তর। দূরদূরান্ত থেকে আসা বয়স্ক রোগী বা রোগিণীরা অনেকেই অসুস্থ শরীরে নানা সমস্যায় পড়তেন বলে হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে। তাঁদের সুবিধার জন্যই ওই বিশেষ ব্যবস্থা চালু হয়েছে হাসপাতালে। |
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে বয়স্ক রোগীদের ওয়ার্ড।— নিজস্ব চিত্র। |
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তণিমা মণ্ডল বলেন, “ওই হাসপাতালে বহু বয়স্ক মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। তাঁদের সুবিধা ও সম্মান জানানোর জন্যই আমরা ওই ব্যবস্থা নিয়েছি।” হাসপাতালের সুপার শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ট্রেন ও বাসে আসন সংরক্ষণ করা থাকে। আমাদের উদ্যোগটাও অনেকটা সে রকমই। আমরা বয়স্ক রোগীদের দুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করেছি।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য বহির্বিভাগের পাশেই আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এক সঙ্গে ১০-১৫ জন বসতে পারছেন। সেখানেই তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে। এর পরে যাঁর যেমন অসুখ, সেই মতো পরীক্ষার জন্য তাঁদের নির্ধারিত জায়গাগুলিতে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেও তাঁদের সে ভাবে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এ জন্য আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা হয়েছে।
হাসপাতালের এই উদ্যোগে খুশি বয়স্ক রোগীরা। পোলবার বাসিন্দা বছর সত্তরের সদানন্দ দাস বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। মাসে চার-পাঁচ বার তাঁকে ওই হাসপাতালে আসতে হয়। তাঁর কথায়, “নতুন ব্যবস্থায় খুব সুবিধা হয়েছে। ডাক্তারবাবুকে দেখানোর জন্য আর বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।” সম্প্রতি পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে গিয়েছিল জিরাটের ষাটোর্ধ্ব তপন বৈরাগীর। তিনিও ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসছেন। তিনি বলেন, “এত দিন লাইন দিয়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে পারলেও অনেক সময়েই অন্যান্য পরীক্ষার সময় পাচ্ছিলাম না। এখন সমস্যা মিটেছে। আমাদের মতো বয়স্কদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় উপকৃত হয়েছি।” একই বক্তব্য অন্যদেরও। |