দু’মাস আগে অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম হয়েছিল। অভিযোগ, তখন গজ-ব্যান্ডেজ বের না করেই প্রসূতির ক্ষতস্থান সেলাই করে দিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক। শনিবার বাড়িতে কামারুন্নেসা বিবি
|
কামারুন্নেসা বিবি।
—নিজস্ব চিত্র। |
নামে ওই প্রসূতির ক্ষতস্থান পরিষ্কার সময় সেই গজের সুতো দেখতে পাওয়া যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে দেবগ্রামের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করান পরিজনেরা। আল্ট্রা সোনোগ্রাফির পর দেখা যায় পেটের মধ্যে সত্যিই রয়েছে গজ।
এই ঘটনায় রবিবার কৃষ্ণনগর থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলার স্বামী পেশায় দিনমজুর সাহাদাত শেখ। আইসি অলোকরঞ্জন মুন্সি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। ওই অভিযোগপত্র মেডিক্যাল বোর্ডের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” অভিযুক্ত চিকিৎসক সুধীররঞ্জন সরকার অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দত্ত বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। তবে ওই মহিলার পরিবারের তরফে এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চিকিৎসায় গাফিলতির নজির কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে এই প্রথম নয়। আগেও এক প্রসূতিকে ‘পরীক্ষার’ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পেটে ‘গ্যাস’ রয়েছে বলে রায় দিয়েছিলেন। অথচ পরদিনই ওই মহিলার প্রসব হয়। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে কী হবে? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অধীপ ঘোষের আশ্বাস, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জের বড় চাঁদঘরের বাসিন্দা কামারুন্নেসা বিবিকে গত ১৯ অগস্ট প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরদিন দুপুরে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। ২৬ অগস্ট তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। অভিযোগ, বাড়ি ফেরার দিনকয়েক পর থেকেই পেটে যন্ত্রণা শুরু হয় কামারুন্নেসার। ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বেরোতে থাকে। ফের তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু সুধীরবাবু তখন হাসপাতালে ছিলেন না। প্রসূতির বাড়ির লোকজন ওই চিকিৎসকের চেম্বারে গেলে বলা হয়, ডাক্তারবাবু ছুটিতে বাইরে গিয়েছেন। সাহাদাত শেখ তখন ফোনে সুধীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাহাদাতের বক্তব্য, “ডাক্তারবাবু বলেন, অন্য কোনও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে। তখন স্ত্রীকে নিয়ে কৃষ্ণনগরেই আর এক চিকিৎসকের কাছে যাই। তাঁর নির্দেশমতো ওষুধ খেয়েও স্ত্রীর পেটে ব্যথা কমেনি। পুঁজও বেরোতে থাকে।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর কামারুন্নেসার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বাড়িতেই চলতে থাকে ক্ষতস্থান পরিষ্কার। শনিবার পুঁজ পরিষ্কার করার সময় স্বামী সাহাদাতই ক্ষতের ভিতর গজ-ব্যান্ডেজের সরু সুতো দেখতে পান। তিনি বলেন, “এরপরই স্ত্রীকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। আল্ট্রা সোনোগ্রাফির পর দেখা যায় পেটের মধ্যে গজ রয়েছে।” গোটা ঘটনায় কামারুন্নেসাও হতবাক। তাঁর বক্তব্য, “অস্ত্রোপচারের পর থেকেই পেটে যন্ত্রণা হত। সেলাইয়ের জায়গায় ফাঁক ছিল। তবে ভেতরে যে গজ রয়ে গিয়েছে, ভাবিনি।” নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কামারুন্নেসা এখন বিপন্মুক্ত। |