জননী সুরক্ষা
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, প্রসূতিরা চেক পাচ্ছেন না
গদ টাকা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা চেক-এর মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র প্রসূতিদের অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই গত তিন মাস ধরে জননী সুরক্ষার টাকা দিতে রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছে রাজ্য সরকার। বহু প্রসূতিই টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
জননী সুরক্ষা যোজনায় সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুর জন্ম দিলে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত সদ্য প্রসূতিদের ১ হাজার টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৯০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এত দিন টাকা দেওয়া হত নগদে। কলকাতায় আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তাঁদের হাসপাতাল থেকে ১৫০-২০০ জন সদ্যপ্রসূতি জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা পেতেন। নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় এখন মাসে ২০-২৫ জনের বেশি প্রসূতিকে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও মাসে গড়ে ৩০০-৩৫০ জন প্রসূতি টাকা পেতেন। কিন্তু গত দু’তিন মাসে সেখানে চেক নিয়েছেন মাত্র ৩০-৪০ জন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে: কোচবিহার (বিশেষ করে তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ ব্লক-এ), পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে চেকের মাধ্যমে টাকা না-পাওয়া প্রসূতি-র সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজ্য পরিবার কল্যাণ দফতর এ জন্য কেন্দ্রকেই পরোক্ষে দায়ী করেছে। দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, “নিয়ম বদলের সময় কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেনি। অথচ এর ফল ভুগতে হচ্ছে আমাদের।”
কেন এই নতুন নিয়ম আদৌ চালু করল কেন্দ্র? সরকারি সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা সমীক্ষা করে দেখেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই প্রসূতির বদলে তাঁর স্বামী, শ্বশুর, দেওর বা ভাশুর নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। সে টাকা প্রসূতিদের উপকারে লাগছে না। ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছিল বলে মন্ত্রকের বক্তব্য। এই কারণেই নিয়ম বদল করে জুলাই মাস থেকে নগদের বদলে চেক-এ টাকা দেওয়া শুরু হয়। ঠিক হয়, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীরা গর্ভবতীদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করবেন।
তা হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারা যাচ্ছে না কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করাতে গিয়ে মূলত তিনটি সমস্যা হচ্ছে। • অধিকাংশ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কো-অপরেটিভ ব্যাঙ্ক ‘জিরো ব্যালান্স’-এ অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি নয়। • প্রত্যন্ত এলাকায় বহু গ্রামে ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। • অনেক প্রসূতির ঠিকঠাক পরিচয়পত্রই নেই। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এ বার থেকে নাবালিকা প্রসূতিরাও প্রকল্পের টাকা পাবেন। তাই তাদের নামেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ প্রসঙ্গে এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, নাবালিকাদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কোনও নিয়ম নেই এই যুক্তি দেখিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হচ্ছেন না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ওই কর্তার কথায়, “এই অসুবিধার কথা জানিয়ে কেন্দ্রকে দু’টি চিঠি লিখেছি। উত্তর আসেনি।”
তবে এই চার দফা সমস্যা সমাধানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।এই বৈঠক প্রসঙ্গে বিশ্বরঞ্জনবাবু পরে বলেন, “স্বামী বা কোনও অভিভাবকের সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলেও প্রসূতিরা টাকা পাবেন। এখন ১০০ দিনের কাজের জন্য অনেকের অ্যাকাউন্ট হয়েছে। সেটা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট হলে সেখানেই প্রসূতির টাকা পাঠানো হবে।” ব্যাঙ্কার্স কমিটির আহ্বায়ক ইউনাইটেড
ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্পোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস ম্যানেজার অজিতেশ্বর বিশ্বাস জানান, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীর খাতায় কোনও গর্ভবতীর নাম রয়েছে অথচ তাঁর কোনও যথাযথ পরিচয়পত্র নেই এমন ক্ষেত্রেও যাতে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় তার জন্য সব ব্যাঙ্ককে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, দূরত্বের জন্য যে সব প্রসূতির ব্যাঙ্কে যাতায়াতের অসুবিধা রয়েছে, তাঁদের ই-ব্যাঙ্কিংয়ের সুবিধা দিতে দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর আশা করছে, সুরাহা মিলবে।
কিন্তু প্রশ্ন, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে চেক জমা পড়লেও তো প্রসূতি টাকা নাও পেতে পারেন! তা হলে নতুন নিয়মের লক্ষ্য পূরণ হবে কী করে? জননী সুরক্ষা যোজনার উপদেষ্টা বিপিন গর্গ উত্তর এড়িয়ে বলেন, “যদি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কিছু মহিলার হাতেও টাকা যায় সেটাই সাফল্য। প্রসূতি টাকা না পেলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনে নালিশ করতে পারেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.