জল ছাড়া নিয়ে আজ, সোমবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে ডিভিসি-র যে বৈঠক হওয়ার কথা, শেষ মুহূর্তে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, এই বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, ডিভিসি কর্তারা সেচসচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলছেন। অথচ, গোটা বিষয়টি দেখছেন তিনি নিজে। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, ডিভিসি-র সঙ্গে বৈঠক করার কোনও দরকারই নেই। ফলে তারা সময় চাইলেও তিনি দিতেন না।
এই অবস্থায় আজ সেচসচিবের সঙ্গে ডিভিসি কর্তাদের বৈঠক আদৌ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বৈঠকের সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছেন। ডিভিসি-র তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, বৈঠক হবে না এমন কোনও খবর রবিবার রাত পর্যন্ত তাদের কাছে নেই। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “কাল বৈঠক আছে। সেই মতো আমরা যাচ্ছি। জল ছাড়া নিয়ে যাবতীয় তথ্য সরকারের কাছে পেশ করব। বৈঠক নিয়ে সরকারের অন্য কোনও মনোভাব আমাদের জানা নেই।”
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ কীসের?
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, ডিভিসি জল ছাড়ার যে যুক্তিই দিক, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জল ছেড়ে তারা রাজ্যের চার জেলাকে জলমগ্ন করেছে। জল ছাড়ার খবর আগে থেকে রাজ্য সরকারকে জানায়ওনি। সরকারের এক মুখপাত্র এ দিন দাবি করেন, জল ছাড়ার দিনগুলিতে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও সাড়া মেলেনি। ফলে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার ঘটনাকে ‘ম্যান মেড’ আখ্যা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকছে সরকার।
এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ ডিভিসি। সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, অতিবৃষ্টির কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের জল বিপদসীমার উপরে উঠে যায়। এই পরিস্থিতিতে জল ছাড়তেই হত। তবু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম জল ছেড়েছেন তাঁরা। এবং প্রতিদিন জল ছাড়ার খবর রাজ্য সরকারকে আগাম জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তাদের এই বক্তব্যের সমর্থনে নথিপত্র আজকের বৈঠকে রাজ্যের সামনে পেশ করতে চাইছিলেন ডিভিসি কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য, ডিভিসি এবং প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের ফলে এ রাজ্যের বহু মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। তাই ডিভিসি কী বলল, তাতে কিছু যায়-আসে না। ওদের কথা যুক্তিগ্রাহ্য বলেও মনে করেন না তিনি।
শনিবারও ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছেড়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিল রাজ্য। যে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিভিসি। রবিবার অবশ্য সরকারি সূত্রে বলা হয়, এ দিন নতুন করে ডিভিসি আর জল ছাড়েনি। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিরও সার্বিক উন্নতি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার এলাকার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা বাদ দিয়ে বাকি সব জায়গা থেকে জল নেমে গিয়েছে। |
মুকুল-কুণাল সাক্ষাৎ ঘিরে জল্পনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সারদা-কাণ্ডে দিল্লিতে ডেকে তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে অর্থনৈতিক প্রতারণা সংক্রান্ত বিভাগ এসএফআইও। ডাক পড়তে চলেছে দলের আরও এক রাজ্যসভা সাংসদের। এই অবস্থায় জল্পনা বাড়াল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কুণালের সাক্ষাতের খবর। কুণালের দাবি, রবিবার সকালে নিজাম প্যালেসে মুকুলবাবুর কাছে তিনি বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, “উনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আমি তৃণমূলের এক জন কর্মী হিসাবে তাঁকে পুজোর পরে শুভেচ্ছা জানাতে যেতে পারি না?” সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য বিষয়টাকে এত হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। কুণালের কাজকর্মের দায় দল নেবে না, এই বার্তা দিতে রাজ্যসভার সাংসদকে সাসপেন্ড করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তার পরে দিল্লিতে ঘটনাপ্রবাহ যে ভাবে গড়িয়েছে, তাতে দলের নাম জড়িয়ে গিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তিই বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল যত কেন্দ্র-বিরোধী সুর চড়া করছে, দিল্লিও পাল্টা দলকে অস্বস্তিতে ফেলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করছে এমন ভাবেও সাম্প্রতিক সব ঘটনার ব্যাখ্যা করছে তৃণমূলের একাংশ। এই প্রেক্ষিতেই তদন্তকারীদের কাছে কুণালের দিয়ে-আসা বয়ান দলীয় স্তরে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে তৃণমূলের অন্দরেই জল্পনা প্রবল। মুকুলবাবু অবশ্য সে সব উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বা শুভেচ্ছা জানাতে অনেকেই আসেন। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদের সঙ্গে গোপনে কথা বলার কোনও প্রশ্নই নেই। “কোনও আলোচনা হয়নি,” দাবি মুকুলবাবুর।
|