জল-বৈঠকের আগেও তরজা চলছে সরকার আর ডিভিসি-র
ল-কাজিয়া নিয়ে মুখোমুখি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে চাপানউতোরের পারদ চড়াল ডিভিসি এবং সরকার, দু’পক্ষই। রাজ্যের অভিযোগ, ডিভিসি খেয়ালখুশিমতো জল ছাড়ে। সরকারের পরামর্শের ধার ধারে না। সেচের জন্য অতিরিক্ত জল চাইলে পাওয়া যায় না। অথচ, যে সময় জল ধরে রাখার কথা, তখন জলাধার খুলে দেয়। রাজ্যের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার পাল্টা বক্তব্য, চাহিদামতো সেচের জল সব সময়ই দেওয়া হয়। যদি না-ই দেওয়া হবে, তা হলে রাজ্যে চাষ বাড়ছে কী করে!
জল ছাড়া নিয়ে কাজিয়া ক’দিন ধরেই চলছে। বিভিন্ন জলাধারের ছাড়া জলে রাজ্যের চার জেলা হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা ডুবে যাওয়ায় এক দিকে যেমন ডিভিসি-কে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডকেও। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে জল ছেড়েছে ডিভিসি ও ঝাড়খণ্ড। তারই জেরে বহু মানুষকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ আখ্যা দিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখে নালিশ জানিয়েছেন মমতা।
এই অভিযোগের যে কোনও ভিত্তি নেই, তা বোঝাতে আগামী সোমবার নথিপত্র নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ডিভিসি-কর্তাদের। সংস্থার দাবি, অতিবৃষ্টির কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জলতল বিপদসীমার উপরে উঠে যায়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পুজোর মধ্যেই জল ছাড়া শুরু করতে বাধ্য হয় তারা। কিন্তু যে পরিমাণ জল ছাড়ার কথা ছিল, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তার চেয়ে অনেক কমই জল ছাড়া হয়েছে। আর সে কথা রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের আগাম জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “দু’-তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাধারগুলির এমনই অবস্থা যে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পরেও জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছি আমরা।”
ডিভিসি-র দাবিকে সমর্থন করেছে ঝাড়খণ্ডও। সে রাজ্যের জলসম্পদ বিভাগের সচিব (পরিকল্পনা) অবিনাশ কুমার একাধিক বার বলেছেন, অতিবৃষ্টির কারণেই গালুডি জলাধার থেকে জল ছাড়তে হয়েছে। কলকাতার আবহাওয়া দফতরও জানিয়েছে, অক্টোবরের গোড়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠা মৌসুমি অক্ষরেখার দাপটে হঠাৎই বৃষ্টি বেড়ে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। এ মাসের প্রথম ১৫ দিনে ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি। ঘূর্ণিঝড় পিলিন-এর জেরে সেই পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে।
ডিভিসি সূত্রে বলা হচ্ছে, অতিবৃষ্টির জন্যই যে বাড়তি জল ছাড়তে হয়েছে, এবং তাতে যে মানুষের কোনও হাত নেই, সেটাই তথ্য পেশ করে রাজ্য সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।
কিন্তু ঘটনা হল, সেই বৈঠকের দু’দিন আগে, শনিবার ডিভিসি-র বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ শানিয়েছেন রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের যুগ্মসচিব অমিত চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “সেচের জন্য যে সময় জল চাওয়া হয় তখন চাহিদামতো জল দেয় না ডিভিসি। আবার যে সময় জল ধরে রাখার কথা তখন জলাধারগুলি খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে ভুগতে হয় রাজ্যের মানুষকে।” অমিতবাবুর আরও অভিযোগ, জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসি এবং সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু সেখানে রাজ্যের মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ডিভিসি-ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজ্যের আনা এই সব অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি ডিভিসি। তাদের বক্তব্য, সেচের জন্য নিয়মিত জল দেওয়া হয় বলেই তো রাজ্যে চাষ বাড়ছে। আর কখন, কোথায়, কত জল ছাড়া হবে, তা নিয়ম করে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে শনিবারও জল চেড়েছে ডিভিসি। সেই জল দুর্গাপুর ব্যারেজে জমা হওয়ায় সেখান থেকে ৩৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হয়েছে। রাজ্যের এই দাবি মানতে চায়নি ডিভিসি। এক ডিভিসি-কর্তা বলেন, “শনিবার পাঞ্চেত থেকে ১২ হাজার ও মাইথন থেকে ৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ওই পরিমাণ জল সারা বছরই কম-বেশি ছাড়া হয়। তাতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে কত জল ছাড়া হয়েছে তার দায় ডিভিসি নেবে না জানিয়ে ওই কর্তা বলেন, দুর্গাপুর ব্যারেজের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রাজ্য সরকারের হাতে। সেখান থেকে কত জল ছাড়া হবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
এই জল-কাজিয়ার মধ্যেই অবশ্য জলমগ্ন এলাকার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, দুই মেদিনীপুরের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভাল। জল দ্রুত নামছে। ত্রাণ শিবিরের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। নতুন করে কোনও প্রাণহানি হয়নি। বর্তমানে জলমগ্ন এলাকাগুলিতে ১৮৭টি শিবির চলছে। ত্রাণ বিলি নিয়ে বেশ কিছু এলাকার মানুষ অভিযোগ করলেও সরকারের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্লকে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। তবে প্রবল জলস্রোতের কারণে কোথাও কোথাও নৌকাও চালানো যায়নি। সেই কারণেই ওই সব এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। তবে সাপের কামড়ের প্রতিষেধকের কোনও অভাব কোথাও নেই।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে ভেঙে যাওয়া কাঁসাই নদীর বাঁধ তৈরির কাজ শেষ। ক’দিন ধরে বাঁধ বাঁধার কাজ করছিলেন সেনাবাহিনী ও সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.