বনগাঁ আদালত চত্বরের কাছে নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির দোতলা থেকে বিবস্ত্র এক মহিলার দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ ওই বাড়ির নির্মাণ কাজের লোকজন এসে গেট খুলে দোতলায় গিয়ে মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের গলায় ফাঁসের চিহ্ন রয়েছে। দেহের পাশ থেকে একটি তার ও মুড়ির ঠোঙা উদ্ধার করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “বছর চল্লিশের ওই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়।” যেখানে খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার আশপাশেই রয়েছে মহকুমাশাসকের দফতর, বনগাঁ উপ-সংশোধনাগার, এসডিপিও-র অফিস। এলাকায় পুলিশি টহরদারিও থাকে। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস ধরেই বনগাঁ আদালত চত্বরের কাছে ওই বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক প্রৌঢ় বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা মাস ছয়েক ধরে ওই বাড়িতে রয়েছেন। কখনও নিজে রান্না করে খেতেন। কখনও স্থানীয় লোকেরা খেতে দিতেন। রাতে বাড়িতে বাইরে থেকে লোকজন এসে আড্ডা মারত। মদ খেয়ে হইহল্লা করত। কিন্তু গতকাল কোনও চেঁচামেচি শোনা যায়নি।” ওই বাড়ির নির্মাণকাজের এক শ্রমিক মোহন মণ্ডল বলেন, “এ দিন সকালে এসে দেখি এক মহিলা পড়ে রয়েছে। গায়ে কোনও কাপড়-জামা নেই। আগেও ওঁকে এলাকায় দেখেছি। দেহের পাশে একটা তার ও মুড়ির ঠোঙা পড়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে দেহ নিয়ে যায়।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগেও এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর আগে ওই বাড়ির পাশেই বাসস্ট্যান্ডে বাসের মধ্যেই গুলি করে এক যুবককে খুনের ঘটনা ঘটে। তার পর বনগাঁ মহকুমা আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের লাইব্রেরিতে বইপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় বেশ কিছু সরকারি দফতর রয়েছে। কিন্তু সন্ধের পর এলাকায় পর্যাপ্ত আলো থাকে না। তারই সুযোগ নিয়ে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ ঘটে। পুলিশের যে তেমন নজরদারি নেই তা ফের এই খুনের ঘটনায় প্রমাণ হল।
বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, ‘‘অতীতে আমরা এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড সরানোর জন্য প্রশাসনের কাছে বার বার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। তা ছাড়া এলাকায় পুলিশ টহলদারিও দেখা যায় না। ওই মহিলার বাড়ি দেবগড় এলাকায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। মহিলার এক মেয়েও রয়েছে। মাকে খুন করা হয়েছে বলে তিনি থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন।”
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “মহিলা খুনের ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে ও এলাকায় টহলদারি বাড়ানোর জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” |