জার্মানির বুন্দেশলিগা আর ভারতের আই লিগ-- দুই দেশের দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে এমনিতে তুলনাই আসে না। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘ভুতুড়ে গোল’-এর অভিনব ঘটনা যেন এক ফ্রেমে নিয়ে এল দু’ দেশের ফুটবলকে। বুন্দেশলিগায় শুক্রবার রাতে হফেনহেইমের বিরুদ্ধে বেয়ার লেভারকুসেনের স্ট্রাইকার স্টিভন কিসলিংয়ের করা সাইড নেট ছিঁড়ে গোল নিয়ে এই মুর্হূতে ফুটবল বিশ্বে বিতর্কের ঝড় বয়ে চলছে। যে গোলকে বলা হচ্ছে ‘ঘোস্ট গোল’। কিসলিং পরে এই গোলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেছেন, “আমি হেড করার পর শুধু দেখেছি গোল হয়েছে। ম্যাচের উত্তেজনায় খেয়াল করিনি কোথা দিয়ে গোল হয়েছে। পরে টেলিভিশনে রিপ্লে দেখার পর খুব খারাপ লাগছিল। আমি এর জন্য বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”
একই ঘটনা শনিবার ঘটেছে যুবভারতীতে। আই লিগের মোহনবাগান-সালগাওকর ম্যাচে। কাতসুমির শট সাইড নেটের তলা দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। কিন্তু রেফারি সন্তোষ কুমার গোল দেননি। |
‘ভুতুড়ে’ গোল কী?
সাইড নেট দিয়ে আচমকা বল গোলে ঢুকে গেলেও, রেফারির নজরে
অনেক সময় পড়ে না। ভুলবশত রেফারির গোলের বাঁশিও বেজে ওঠে। |
বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯৪ সালেই নুরেমবার্গের বিরুদ্ধে বায়ার্ন মিউনিখ এ ভাবেই একটি ‘ভুতুড়ে গোল’ করে ম্যাচ জিতে যায়। পরে অবশ্য আসল ঘটনা সামনে আসায় ম্যাচটি রিপ্লে হয়। ভারতীয় ফুটবলেও এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার ও কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই যেমন বললেন, “১৯৫৯ সালে মারডেকা কাপে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আমার একটি শট সাইড নেট ছিঁড়ে গোলে ঢুকে গিয়েছিল। রেফারি গোলও দিয়ে দেন। কিন্তু আমি গিয়ে সত্যিটা বলি। যে জন্য ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড-ও পেয়েছিলাম। আসলে এ ক্ষেত্রে সব সময় রেফারিকে দোষারোপ করা যায় না। এত গতিতে খেলা হয় যে অনেক সময়ই রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ফুটবলারদেরই সৎ থাকতে হয়।” ভারতের প্রাক্তন কিপার অতনু ভট্টাচার্যও নিজের অভিজ্ঞতার কথা টেনে বলেন, “আমি তখন মহমেডানে খেলি। চিমাও একই দলে। সালটা ঠিক মনে নেই। কলকাতা লিগে খিদিরপুরের সঙ্গে ম্যাচ। খিদিরপুরের গোলকিপার ছিল দিলীপ পালিত। চিমার একটি গোলার মতো শট সাইড নেট ছিঁড়ে গোলের মধ্যে ঢুকে যায়। চিমা গোলের দাবি করলেও রেফারি সে দিন গোল দেননি। এই নিয়ে মাঠে ঝামেলাও হয়েছিল। খেলা ভণ্ডুল হয়ে যায়।” শুধু ফুটবলাররাই নন। রেফারিদের গলাতেও একই সুর। তাঁরা প্রত্যেকেই মনে করেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। প্রদীপ নাগ বলে দিলেন, “এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সমস্যার। ফুটবলারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে পুরো মাঠের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। আর এ ধরনের গোলগুলো এত দ্রুত হয় যে রেফারি সব সময় জায়গাতে পৌঁছতেই পারেন না।” মিলন দত্ত অবশ্য বললেন, “এখন টেকনিক্যালি অনেক উন্নত হয়েছে রেফারিং। এ ধরনের ভুল কমই হয়। তবে দু’-একটি ঘটনা যে চোখ এড়িয়ে যেতেই পারে।” ভারতের মতোই বিশ্ব জুড়ে এখন ‘ভুতুড়ে গোল’ নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কিসলিং ক্ষমা চেয়ে নিলেও কিন্তু সততা নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে। হফেনহেইম এর তীব্র প্রতিবাদ করে জানিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজনে তারা ফিফার দ্বারস্থ হবে। |