বুজিয়ে ফেলা পুকুর আগের অবস্থায় ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেই কাজ করে উঠতে পারল না জেলা মৎস্য দফতর। দফতরের জেলা সহ-অধিকর্তা দেবাশিস পালুই বলেন, “আদালতের নির্দেশ পেয়েছি। বোজানো পুকুর খোঁড়ার জন্য যে টাকা প্রয়োজন তা আমাদের কাছে নেই। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে কাটোয়া স্টেডিয়াম আবাসনের বাসিন্দা তথা মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর কাটোয়া শাখা সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বোজানো পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরানোর দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালতে তিনি অভিযোগ করেন, সার্কাস ময়দান-স্টেশন রোড এলাকায় একটি লজের পিছনে একটি পুকুর ১৯৯৩ সাল থেকে বোজানো হচ্ছে। ঘোষহাট মৌজায় ৪৫ শতকের ওই পুকুরটির ২৫-২৮ শতক বোজানো হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিন বছর ধরে মামলা চলার পরে গত ৫ জুলাই বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি মৎস্য দফতরের বর্ধমান জেলার সহ-অধিকর্তাকে তিন মাসের মধ্যে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরাতে নির্দেশ দেন। |
স্টেশন রোড এলাকার এই পুকুর নিয়েই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই মানবাধিকার সংগঠন সূত্রে জানা যায়, পুকুরটি বোজানো নিয়ে স্থানীয় মানুষজন সরব হয়েছিলেন। তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এর বিরুদ্ধে আবেদনও করেছিলেন। অভিযোগ, এর পরেই পুকুর মালিকদের একাংশ নানা ভাবে ওই বাসিন্দাদের হুমকি দিতে থাকেন। তা সত্ত্বেও এলাকাবাসী ১৯৯৩ সাল থেকে প্রশাসনের নানা স্তরে চিঠি পাঠান। ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পুকুর মালিকদের চিঠি দিয়ে পুকুর খননের নির্দেশ দেয় জেলা মৎস্য দফতর। কিন্তু মালিকেরা সেই চিঠি নিতে অস্বীকার করায় সে বছর ৭ নভেম্বর পুকুর নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দেয় মৎস্য দফতর। মালিকেরা একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তার ফয়সালা হচ্ছে না দেখে সুব্রতবাবু মামলা করেন।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তিন মাসের মধ্যে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফেরানোর নির্দেশ দিলেও তা হয়নি কেন? মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই পুকুরের দুই-তৃতীয়াংশ বুজে গিয়েছে। দফতরের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে মাপজোক করে দেখা গিয়েছে, পুকুরটি সংস্কার করতে লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। তা দফতরের কোনও বিভাগে নেই। তাই মৎস্য দফতরের অধিকর্তার কাছে টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে বর্ধমান জেলা মৎস্য দফতর। তা পেয়ে মৎস্য সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে টাকা চেয়েছেন অধিকর্তা।
পুকুরটি খননের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও তাঁরা ফ্যাক্স-বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। সুব্রতবাবুর দাবি, “টাকার অভাবে মৎস্য দফতর কাজ করতে পারছে না, এটা স্রেফ বাহানা।” কাটোয়ার বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “পরপর পুকুর বোজানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে মৎস্য দফতরকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সমস্যা বেড়ে চলেছে।” ওই পুকুরের মালিকদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা দেবাশিসবাবু জানান, নানা সংস্থাকে চিঠি দিয়ে বোজানো পুকুরটি খননের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। যে সংস্থা কাজ করে দেবে, টাকা এসে গেলে তাদের তা মিটিয়ে দেওয়া হবে। |