আশঙ্কায় বহরমপুরের বাসিন্দারা
ফোনেই মিলছে দেদার শব্দবাজি
দোদমা বাজির কথা জিজ্ঞেস করতেই ভ্রূ-কুঁচকে বহরমপুরের নতুনবাজার এলাকার এক বাজি ব্যবসায়ীর পাল্টা জিজ্ঞাসা, “ওই নামে কোনও শব্দবাজি বাজারে বিক্রি হয় নাকি?” এর পরেই গলার স্বর নামিয়ে তাঁর বিস্ময়, “আমার দোকানে শব্দবাজি রয়েছে, আপনি জানলেন কার কাছ থেকে?” বহরমপুরের এক পুজো উদ্যোক্তার নাম বলতেই ওই বাজি ব্যবসায়ী দোকানের এক কিশোরকে পাঠিয়ে দেন। কিছু ক্ষণ পরেই ঝোলা থেকে বের হয় ‘বাজি’। প্যাকেট প্রতি দোদোমা ১৫০ টাকা। এক প্যাকেটে ৬টি রয়েছে। এভাবেই কাগজ ও মাটির তুবড়ি, রকেট, রং-মশাল, চরকি, দড়ির বাজি, তারাকাঠির আড়ালে বিক্রি হচ্ছে শব্দ-দানব!
শব্দবাজি ফাটানোর শুরু মহালয়ার রাত থেকে। কালীপুজোর রাতে তা চরম আকার নেবে বলে আশঙ্কা বহরমপুরের নাগরিকদের। এ দিকে তুবড়ি, দোদোমা, চকোলেট, ধানি পটকা ছাড়াও আলোর বাজি বলে খোলা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে, তা যে কোনও শব্দবাজিকেও হার মানায়। তাই কালীপুজোর আগে ওই ধরনের শব্দবাজি বানানোর কাজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা চলছে রেজিনগর, জিয়াগঞ্জ, বেলডাঙা, সারগাছি, ভাবতা, শক্তিপুর, অরঙ্গাবাদের মত প্রত্যন্ত গ্রামের কারখানাগুলিতে।
বিভিন্ন বাজি কারখানার মালিক থেকে বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন বড় পুজোকর্তাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। কালীপুজোর আগে মোবাইল ফোন মারফৎ বাজির অর্ডার দেওয়ার পরে রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে পুজো কমিটির কর্তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় শব্দবাজি, তেমনি খুচরো ও পাইকারি বাজি ব্যবসায়ীদের দোকানেও তা পৌঁছে যায়। রেজিনগরের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বাজি তৈরির কাজে জড়িত। ওই সকল পরিবারের সকলেই বাজি তৈরিতে দিন-রাত খেটে চলেছেন। তাঁদের কথায়, পুজোর মাস দুয়েক আগে থেকে বর্ধমান, নদিয়া, বাঁকুড়া, হুগলি, মালদহ, ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গ ও অসমের বিভিন্ন পুজো কমিটি ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের পছন্দের বাজি বানিয়ে দেওয়ার জন্য অর্ডার দিয়ে যান। কিছু টাকা অগ্রিম বায়না হিসেবেও তাঁরা দেন।
এমনই এক বাজি কারখানার মালিক মামুদ আলি (নাম পরিবর্তিত) বলেন, “পাঁচ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন রকমের ও আকারের গাছ রয়েছে। শব্দ-আলো দেখবার মত। সেই সঙ্গে চরকি, উল্কা, তুবড়ি রয়েছে।” কিন্তু তার আওয়াজ? এবারে হেসে ফেললেন ওই বাজি কারখানার মালিক। তাঁর কথায়, “খাগড়ায় চত্বরে ফাটলে তার আওয়াজ হরিদাসমাটি পর্যন্ত শোনা যাবে। ফোনে অর্ডার দিলে পৌঁছেও দিতে পারি।”
অন্য এক বাজি ব্যবসায়ী বলেন, “বাবা-ঠাকুর্দারা শোলা ও ডাকের সাজের কাজের পাশাপাশি বাজি তৈরি শুরু করেন। অর্ডার পেলেই তাঁরা বাজি বানাতেন। আর এখন সারা বছরই বাজি তৈরির কাজ চলে। বিয়ে, গাজন, রথ, বেরা উৎসব প্রভৃতি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানের সমাপ্তির দিনে বাজি পোড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তবে দুর্গাপুজো ও কালীপুজো উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি বাজি পোড়ানো হয়ে থাকে।”
জেলা পুলিশ প্রশাসন অবশ্য এই সব কারখানার খোঁজ পায় না! মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “ কালীপুজোর মুখে জেলার বিভিন্ন বাজারে শব্দবাজির সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নিষিদ্ধ বেশ কিছু শব্দবাজি আটকও হয়েছে।”
বহরমপুরে বড় বাজেটের কালীপুজো করে থাকে গোরাবাজার স্যান্টাফোকিয়া। ওই পুজো কমিটির কর্তা অতীশ সিংহ (কাল্টু) বলেন, “কালীপুজোয় সাধারণ মানুষের শব্দবাজি ফাটানোর প্রবণতা থাকে। এবারও ফাটবে। যদিও আমাদের কালীপুজোয় কোনও শব্দবাজি ফাটানো হয় না। আলোর বাজির প্রদর্শনী হয়ে থাকে।”
শব্দবাজি প্রসঙ্গে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক স্তরে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা না করলে কালীপুজোয় ফের শব্দ-তাণ্ডব শুরু হবে। এতে গৃহস্থ মানুষও আতঙ্কিত বোধ করেন। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।” তাঁর কথায়, “এখন তো আবার শব্দের আওয়াজ ৬৫ ডেসিবেলেরও বেশি জোরে হলেও আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের উচিত ছিল লড়াই করা। কিন্তু তা হয়নি। কোনও ব্যাপারে আমরা সচেতন নই। শব্দদূষণের বিষয়েও যদি এখনও সচেতনতা না আসে, তবে ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। মহালয়া থেকে শুরু হয়েছে। দুর্গাপুজোতেও ফেটেছে। এই সব দেখে বহরমপুরে পুলিশ ও প্রশাসন বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.