বাইপাস থেকে সাউথ সিটি মলে যাওয়ার পথে হঠাৎই এক ঝটকা। আর তাতেই শিরদাঁড়ার নীচে ককসিক্সের হাড়ে বেদম চোট। রীতিমতো ১৫ দিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয় বিধাননগরের দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। দিন কুড়ি আগে নিজের গাড়িতে চড়ে ওই মলে পুজোর বাজার করতে যাচ্ছিলেন। বাইপাস থেকে আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টরে দিব্যি চলছিল গাড়ি। আচমকা রাস্তার মাঝে এক গাড্ডায় পড়ে গাড়ির চাকা। জোর ঝাঁকুনি।
শুধু আনোয়ার শাহ কানেক্টর নয়, পুজোর আগে শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তার হাল ছিল এমনই। তা সারাতে কিছু পদক্ষেপও করে কলকাতা পুর-প্রশাসন। পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ তখন জানিয়েছিলেন, অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থাকা খানাখন্দ বোজানো হবে। সেই মতো দক্ষিণ কলকাতার ধাপা রোড, দেবেন্দ্রচন্দ্র রোড, আনোয়ার শাহ রোড এবং খিদিরপুর এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা সারানোর কাজ শুরু হয়। একইসঙ্গে উত্তর ও পূর্ব কলকাতার মানিকতলা মেন রোড, উল্টোডাঙা মেন রোড, বেলেঘাটা মেন রোড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, এপিসি রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গর্ত বোজানোর কাজও হয়। |
আবার বেহাল ধাপা রোড। ছবি:স্বাতী চক্রবর্তী। |
কিন্তু পুজোর পর কেমন হাল সদ্য সারানো সেই সব রাস্তার?
সরেজমিনে দেখতে গিয়ে মালুম হল, কিছু কিছু রাস্তার গাড্ডা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সে কথা অস্বীকার করেননি খোদ মেয়র পারিষদও। সুশান্তবাবুর কথায়, “পুজোর আগে ও পরে এ বার টানা বৃষ্টি হওয়ায় সাময়িক ভাবে সারানো রাস্তার পিচ উঠে ফের গর্ত বেরিয়ে পড়েছে।” তিনি জানান, পুর প্রশাসন চেয়েছিল পুজোর আগেই সব রাস্তা ভাল করে সারিয়ে তুলবে। কিন্তু বাধ সাধে বৃষ্টি। শেষমেষ তাপ্পি দিয়ে কোনও ভাবে গর্ত বোজানোর কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু একটানা বৃষ্টির কারণে সে সব ধুয়ে মুছে যাওয়ায় ফের শহরের কয়েকটি রাস্তার কিছু কিছু অংশ যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
মানিকতলা মেন রোডে রেল ব্রিজের নীচে পরপর তিনটি ম্যানহোল রীতিমতো গর্তের মধ্যে। দ্রুত গতিসম্পন্ন গাড়ির চাকা ওই গর্তে পড়লে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই হাল ধাপা রোডেও। মসৃণ রাস্তার মাঝে আচমকা বিশাল গর্ত। একের পর এক। কোনওটা আবার জলে ডোবা। একটু এ দিক-ও দিক হলেই বিপদ অবশ্যম্ভাবী। ধাপা রোড পেরিয়েই দেবেন্দ্র চন্দ্র রোড সারাই হয়েছিল অনেক টাকা খরচ করে। ফের একই অবস্থা। ভেঙেচুরে গিয়েছে কিছু অংশ। ট্যাংরায় গোবিন্দ খটিক রোডের দশাও ভাল নয়। তা বিলক্ষণ জানেন মেয়র পারিষদ সুশান্তবাবুও। বললেন, “পুজোর আগেই ওই রাস্তা সারানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এলাকার মানুষের দাবি কংক্রিটের রাস্তা করতে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তিতে ওই রাস্তার পিচের কাজ করা যায়নি বলে জানান সুশান্তবাবু।
একই হাল আনোয়ার শাহ কানেক্টরেও। শহরের অন্যতম ব্যস্ত ওই রাস্তার হাল নিয়ে চিন্তিত পুর প্রশাসনও।
কেন এমন অবস্থা?
সুশান্তবাবু জানালেন, রাস্তাটি আগে কেএমডিএ-র অধীনে ছিল। কিছু দিন আগে তা পুর প্রশাসনের হাতে এসেছে। মেয়র পারিষদ বলেন, “ওই রাস্তার পাশে নালা নেই। ফলে বৃষ্টির জল রাস্তায় জমে থাকে। তাতেই রাস্তা খারাপ হয়।” ওই রাস্তায় দ্রুত নিকাশি নালা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রাস্তা দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। তা না হলে রাস্তা সারিয়েও কোনও লাভ হবে না, বলছেন তাঁরা।
সুশান্তবাবু জানান, শহরের যে সব রাস্তায় পুজোর আগে গর্ত বোজানোর কাজ হয়েছে, আকাশ একটু পরিষ্কার হলেই সেই সব রাস্তায় পুরোদমে সংস্কার শুরু হবে। যদিও তাঁর দাবি, শহরের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা এখন ভাল। দু’চারটি রাস্তায় সামান্য খানাখন্দ রয়েছে। তা শীঘ্রই সারিয়ে ফেলা হবে। |