পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ বোদাগঞ্জ, চিলাপাতা, গজলডোবায় |
পর্যটনে ঠিকানা বাড়ছে ডুয়ার্সে
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
গরুমারা-চাপড়ামারি-জলদাপাড়ার চেনা পথের বাইরে পর্যটনের নতুন গন্তব্য খুঁজছে ডুয়ার্স। বছরদুয়েক আগে রাজ্য সরকার ডুয়ার্সের নতুন পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিল। সেই সমীক্ষার রিপোর্টে গজলডোবা-সহ বেশ কিছু এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। তবে তার বাইরেও বন দফতর এবং ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ডুয়ার্সের বেশ কিছু এলাকা পর্যটন মানচিত্রে উঠে এসেছে দেড় বছরে। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন বোদাগঞ্জ সেই তালিকায় অন্যতম। ভ্রামরী দেবীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা ছিলই। রাত্রিবাসের কোনও সুযোগ ছিল না। বন উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে বোদাগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ইকো-কটেজ। একইরকম ভাবে ডুয়ার্সের নিমাতি এবং জয়ন্তীতেও নতুন করে কটেজ তৈরি করেছে এই দফতর। কালীপুজোর পরেই নতুন তিনটে কটেজ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
ভুটান সীমান্তবর্তী ঝালঙে নদীর পাড়ে তৈরি হয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য ৯টি তাঁবু। বন উন্নয়ন দফতরের থেকে কংক্রিটের মেঝেয় তৈরি তাঁবুতে থাকার জন্য পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে। তেমনিই জলদাপাড়ার উপর চাপ কমাতে চিলাপাতায় কটেজ তৈরি করেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। পাশাপাশি বন দফতরের মূর্তিতে তৈরি করা হচ্ছে ২২টি নতুন কটেজ। রায়মাটাং, মালঙ্গি, রাজাভাতখাওয়ার পর্যটনকেন্দ্র পরিকাঠামো সংস্কার হয়েছে। বেশি সংখ্যক পর্যটকদের রাত্রি বাসের সুযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছে অতিরিক্ত ঘর। সংস্কার হয়েছে বড়দিঘি, ভুটান ঘাটের সরকারি কটেজেরও।
শুধু রাত্রিবাসের সুযোগই নয়, চালসা লাগোয়া টিলাবাড়িতে পর্যটন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে কটেজ এবং পানশালা। বিশেষত, বিদেশি পর্যটকদের কথা মাতায় রেখেই ওই উদ্যোগ। বেসরকারি উদ্যোগও পিছিয়ে নেই। মালবাজার লাগোয়া গরুবাথান থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে পাহাড়ি জনপদ ঝান্ডি এ বার পুজোয় পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য ছিল। গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগেই গড়ে ওঠা ৬টি কটেজ পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা ছিল পুজোর কদিন।
বাসিন্দারা জানান, কালীপুজোর জন্য অগ্রিম বুকিং প্রায় শেষের পথে। মালবাজারের বিধাননগর পঞ্চায়েতেও বেসরকারি উদ্যোগে হয়েছে একাধিক কটেজ। এক ট্যুর অপারেটর তাপস দে বলেন, “একসময় গরুমারা-জলদাপাড়া ছাড়া পর্যটকদের আর কোথাও নিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। সম্প্রতি ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে একাধিক কেন্দ্র যুক্ত হয়েছে। তার ফলে গরুমারা এবং জলদাপাড়ার উপরেও চাপ কমেছে। ঝান্ডি, বিধাননগরের মতো বেশ কিছু পাহাড় লাগোয়া এবং জঙ্গল ঘেরা গ্রামে নিজস্ব উদ্যোগেই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।” গরুমারা জঙ্গলের উপর চাপ কমাতে বন দফতর থেকে লাটাগুড়িতেও নতুন বেশ কিছু কটেজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অসোসিয়েশনের তরফেও ১৮টি নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রশাসনকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কাঠামবাড়ি, খুট্টিমারি জঙ্গলে রাত্রিবাস এবং জঙ্গল সাফারি তৈরির প্রস্তাব-সহ নাগরাকাটা ও মেটেলিতে পর্যটনকেন্দ্র তৈরির মত বিভিন্ন প্রস্তাবও দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে। সংগঠনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, “পরিচিত কেন্দ্রের বাইরেও ডুয়ার্স নতুন করে পর্যটন ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। তবু এখনও ডুয়ার্সের সেই সব পর্যটনকেন্দ্র অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা। সে কারণেই আমরা নতুন ১৮টি কেন্দ্রের সন্ধান দিয়েছি প্রশাসনকে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবুর কথায়, “বেসরকারি ক্ষেত্রের কোনও পরিকাঠামোর প্রয়োজন হলে তা পূরণ করে দেওয়া হবে। আমরা চাই ডুয়ার্সে আরও পর্যটন কেন্দ্র হোক। সকলের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।”
|
ডুয়ার্সকে কেন্দ্র করে পর্যটনের নতুন ব্র্যান্ড তৈরি করতে চায় রাজ্য। সরকারি
উদ্যোগের
পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো হয়েছে।
গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী |
|