রং ও নকশা পাল্টে দক্ষিণ দিনাজপুরের তাঁতের শাড়ির প্রাণ ফেরাতে চলেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। ধুঁকতে থাকা জেলার গঙ্গারামপুরের হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে চাঙা করে তুলতে ‘টেক্সটাইল হাব’ গড়ার প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “সম্প্রতি সরকারি স্তরে গঙ্গারামপুরে টেক্সটাইল হাব তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কেন্দ্রের হ্যান্ডলুম ও টেক্সটাইল বিভাগ থেকে হাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গিয়েছে।” গঙ্গারামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় বলেন, “টেক্সটাইল হাব গড়তে গঙ্গারামপুরের বসাকপাড়ায় ৩০ শতক এবং কালীতলা এলাকায় প্রায় ৫০ শতক জমি চিহ্নিত হয়েছে। একটি জায়গাকে বেছে নিয়ে টেক্সটাইল হাব গড়া হবে। সরকারি সংস্থাকে দিয়ে ইতিমধ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, দলটি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁত শিল্পী এবং মালিকদের চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি তাঁদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ির গৌরব ফেরানোর সরকারি উদ্যোগে খুশি এলাকার হস্তচালিত তাঁতশিল্পীরা। গঙ্গারামপুরে জেলা হস্তচালিত তাঁত সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক রামগোপাল বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘকাল সরকারি উদ্যোগ, নজরদারির অভাবে এখানকার তাঁত শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। টেক্সটাইল হাব গড়া হলে এই শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে। উপকৃত হবেন বহু তাঁত মালিক এবং শিল্পী।”
একদা পূর্ববঙ্গ (বাংলাদেশ) থেকে আগত শরনার্থীরা দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও আশপাশ এলাকায় হস্তচালিত তাঁতশিল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। সাধারণের নাগালের মধ্যে সস্তার জনতা ও মালা শাড়ির পাশাপাশি বাহারি জরি নকশার দামি তাঁতের শাড়ির কদর জেলার পাশাপাশি নদীয়া ও শান্তিপুরের বাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, একসময় গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত তাঁতের সঙ্গে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ যুক্ত ছিলেন। ক্রমশ সুতো ও রঙের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শাড়িতে আধুনিক নকশা তৈরির অভাব এবং উপযুক্ত বাজারের অভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ৮-৯ হাজার মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত। অনেকেই এই শিল্প ছেড়ে পেটের দায়ে দিনমজুর, রিকশা চালানো ছাড়াও ভিনরাজ্যে চলে যান।
২০১১ সালে গঙ্গারামপুরের তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে উদ্যোগী হন স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। সেই সময় তিনি তৎকালীন কংগ্রেসের ক্ষুদ্রকুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কাছে দরবার করেন। মানসবাবু গঙ্গারামপুর এসে আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে হাব গড়ার ঘোষণা করেন। বিপ্লববাবু বলেন, “ওই হাবটির নীচের তলায় থাকবে তাঁত। ভবনটির দোতলা ও তৃতীয় তলায় শাড়ি বাজার বসবে।” |