যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির শাসনে অতিষ্ঠ ফ্রান্সের আম জনতা ভাবী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওলাঁদকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখেছিল। কিন্তু অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত একটি ঘটনায় সম্প্রতি ওলাঁদের ভূমিকা নিয়ে এতটাই বিতর্ক শুরু হয়েছে যে দলের অন্দরে বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত এ মাসের গোড়ার দিকে। রোমা বংশোদ্ভূত বছর পনেরোর একটি মেয়েকে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার পরিবারের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কসোভোয়। ঘটনাটি নিয়ে ফ্রান্সের ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। প্যারিস-সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখান ছাত্ররা। তার কারণ লিওনার্দা দিব্রানি নামে ওই মেয়েটি সেই সময় স্কুলবাসে ছিল। তাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে যে ভাবে প্রশাসনিক অফিসাররা দেশ থেকে বার করে দিয়েছেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। এখানেই শেষ নয়। সমালোচনার মুখে পড়ে গত কাল ওলাঁদ প্রশাসন ঘোষণা করে মেয়েটির পড়াশোনায় বাধা দেওয়া হবে না। সে চাইলে ফিরে আসতে পারে, তবে পরিবার ফ্রান্সে ঢুকতে পারবে না। ফের এই নিয়ে শুরু হয়েছে জলঘোলা। |
বোনকে কোলে নিয়ে লিওনার্দা। ছবি: এএফপি। |
যার জেরে ফরাসি প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে অনেকটাই। ফ্রান্সে একটি রাজনৈতিক সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওলাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন যিনি, সেই ফ্রাসোয়াঁ বেরু বলছেন, “দেশের ভারসাম্যটাই যেন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এক বার একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, কয়েক মুহূর্ত পরেই সেটা পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। ওলাঁদের ক্ষমতা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমে গিয়েছে।” বিরোধীরা বলছেন, ওলাঁদ সোশ্যালিস্ট পার্টির মনরক্ষায় এতই ব্যস্ত যে জনতার ইচ্ছের কোনও দাম নেই তাঁর কাছে। দিব্রানিকে ফেরত পাঠানো নিয়ে দেশের টেলিভিশনে ওলাঁদ বলেছিলেন, আইন মেনেই মেয়েটিকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আরও কৌশলে কাজটা করলে ভাল হত।” অথচ তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা হার্লেম দেসির টিভিতে বলেন, “লিওনার্দার পরিবারকে ফ্রান্সে ফিরতে দেওয়া উচিত। আমি এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলব।” তিনি জানান, লিওনার্দা আর তার ৫ ভাই যাতে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখা হবে।
কসোভোয় বৈষম্যের শিকার হয়ে দিব্রানি পরিবার আশ্রয় চেয়েছিল ফ্রান্সে। এ দেশের পূর্বে দৌব এলাকার লেভিয়ারে থাকতেও শুরু করেছিল তারা। কিন্তু আশ্রয় পাওয়ার আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পরে তাদের বের করে দেওয়ার নোটিস জারি হয়েছিল। সেই নোটিস দু’বার স্থগিত হয়। দিব্রানি পরিবারকে শেষমেশ ৮ অক্টোবর ফ্রান্স থেকে বের করে দেওয়া হয়। লিওনার্দা সেই সময় ছিল এক বন্ধুর বাড়িতে। তাই পরে স্কুলে যাওয়ার পথে বাস থেকে নামিয়ে বন্ধুদের সামনে থেকেই পুলিশ তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওলাঁদ বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘মেয়েটি ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে চেয়ে আবেদন জানালে তাকে ফেরানো হতে পারে।” এই সুযোগ শুধু লিওনার্দার জন্যই, তা স্পষ্ট করে দেন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু লিওনার্দা সাফ জানিয়েছে, পরিবারকে ফেলে সে ফিরতে চায় না। তার কথায়, “আমি ওদের ছেড়ে আসব না। আমি একাই তো আর স্কুলে যাই না। আমার ভাইবোনও আছে।” আপাতত কসোভোর মিত্রোভিকায় রয়েছে দিব্রানি পরিবার। মেয়েটির বাবা রেসাত বলেছেন, “এখানে আমাদের কোনও স্বাধীনতা নেই। পুলিশ যা খুশি বলতে পারে। তবে আমি বুঝে দিয়েছি ফ্রান্সে বিচার মেলে না।” তিনিও জানান, শুধু মেয়েকে ফ্রান্সে কিছুতেই পাঠাবেন না। তবে আশ্রয় চাওয়ার আবেদনে একটি সত্য গোপন করেছিলেন রেসাত। তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের জন্ম ইতালিতে। তিনিই একমাত্র কসোভোর নাগরিক। ইতালিতেও বেশ কয়েক বছর ছিল দিব্রানি পরিবার। |