বর্ণময় প্রেসিডেন্ট জীবনের নয়া হদিস বইয়ে
মেরিকার সব চেয়ে বর্ণময় প্রেসিডেন্টের জীবন আচমকাই থেমে গিয়েছিল আততায়ীর ছোড়া গুলিতে। নভেম্বরের এক শীতের সকালে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের অর্ধশতক পূর্তি এই ২০১৩ তেই। এমনিতে তাঁর বৈবাহিক জীবন নিয়ে চর্চা বেশ পুরনো। কেনেডি হত্যার বর্ষপূর্তির আলোয় নতুন করে তা আরও এক বার ফিরে দেখলেন ব্রিটিশ লেখিকা সারা ব্র্যাডফোর্ড।
যেখানেই জে এফ কে ওরফে জ্যাক কেনেডি, সেখানেই সুন্দরী মহিলাদের ভিড়। নিত্য নতুন নারীসঙ্গ, সোনালি চুলের সুন্দরীদের সঙ্গে সুইমিং পুলের জলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রেসিডেন্ট কেনেডির এই কীর্তি তখন আমেরিকাবাসীর মুখে মুখে ফিরত। আর এ রকম স্বামী নিয়ে দশ বছর ঘর করেছিলেন যে মহিলা, সেই জ্যাকলিন কেনেডির দ্যুতিও ফিকে ছিল না। জ্যাকের শত শত সঙ্গীর মধ্যেও নিজের আলোয় উজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব। কোন আশ্চর্য সমীকরণ যে এই জুটিকে বেঁধে রেখেছিল, সেই ধাঁধাঁর উত্তর মেলেনি আজও।
জন এফ কেনেডির শেষকৃত্যে উপচে পড়ছে ভিড়। ছোট্ট দুই বাচ্চার হাত মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে রেখেছেন মা জ্যাকলিন, স্টাইল আইকন ফার্স্ট লেডিকে সে দিন অন্য ভাবে চিনেছিল দেশবাসী।
জন এফ কেনেডি জ্যাকলিন কেনেডি
স্বামীর উদ্দাম জীবনের দিকে ভ্রূক্ষেপও করেননি একটি বারের জন্য। আবার তাঁকেই ভালবেসে গিয়েছেন প্রাণপণে, হোয়াইট হাউসের এই সুন্দরী ফার্স্ট লেডির জীবনের গল্পই উঠে এসেছে সারা’র ‘আমেরিকা’জ কুইন: দ্য লাইফ অব জ্যাকলিন কেনেডি ওনাসিস’ বইয়ের পাতায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে।
যেমন জর ভাইডাল জানিয়েছেন, জ্যাকলিন তাঁকে নিজেই এক দিন গল্প করেছিলেন যে হোয়াইট হাউসে ঢোকার আগে কখনও স্বামীকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। আর নিজের সুন্দরী স্ত্রীটির দিকে কেনেডিরও নজর পড়ে বহু দিন পর। খবরের কাগজে ফার্স্ট লেডির বড় বড় ছবি বেরোনোর পর। ছবি দেখে অবশ্য মনে ধরেছিল বউকে। তাই নাম ধরে নয় বরং ঠাট্টা করে বউকে ডাকতেন যৌনতার প্রতীক বলে।
“তাঁর পিছনে মোহময়ীদের লাইন যত দীর্ঘই হোক না কেন, কখনও অনুশোচনা করতে দেখিনি জ্যাককে,” জানিয়েছেন জ্যাকলিনের বোন লি রাডজিউইল। উল্টে তাঁর বিশ্বাস ছিল, স্ত্রীকেই ভালবাসেন তিনি। স্ত্রী’র জন্য করতে পারেন সব কিছুই।
কেনেডির মনে প্রথম দিকে একটু ভয় ছিল, প্রেসিডেন্ট হলে হয়তো সঙ্গী বদলের অ্যাডভেঞ্চারে ভাটা আসবে। পাশাপাশি আশাও ছিল সামান্য। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলে কথা। যে মহিলাকে চাইবেন, নিজের সামনে দাঁড় করাতে পারবেন তাঁকেই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিতে যায় তাঁর আশাই।
হোয়াইট হাইসের বিশাল বিশাল ঘরে দমবন্ধ লাগত জ্যাকলিনের। তাই প্রায়ই বাইরে থাকতেন তিনি। গোটা গরমকালটাই প্রায় কাটাতেন ওয়াশিংটনের বাইরে। হোয়াইট হাউসে যদি বা থাকতেন প্রতি শুক্রবার চলে যেতেন তাঁদের খামার বাড়িতে। অথবা কেপ কোডে কেনেডি-পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। ভুলেও ফিরতেন না সোমবারের আগে। ফলে মালকিনহীন শ্বেত প্রাসাদ পুরোটাই মালিকের দখলে।
জন এফ কেনেডির এই রঙিন জীবনের বহু গল্প উঠে এসেছে কেনেডি দম্পতির আর এক পরিচিতের কথায়। থিয়েটারের পর পার্টি দিয়েছিলেন ওই মহিলার এক কাছের বন্ধু। কেনেডির প্রাক্তনীদের তালিকায় ছিলেন সেই বান্ধবীও। নিজের প্রাক্তনীকে সক্কলের সামনেই কেনেডি জিজ্ঞেস করে বসেন, “নতুন কিছু মেয়ের সন্ধান দিতে পারো?” পরে হোয়াইট হাউসে গিয়ে দেখেছিলেন, রীতিমতো ইন্টারভিউয়ের আসর বসিয়ে নিজের পছন্দের সঙ্গী বেছে নেন প্রেসিডেন্ট। আর সব চেয়ে আশ্চর্যের, ওখানেই ছিলেন স্বয়ং মিসেস কেনেডি এত দিন পরও বিস্ময় ঝরে পড়ে ওই মহিলার গলায়।
এর পর কেনেডি-দম্পতির সঙ্গে শেষ দেখা হয় হোয়াইট হাউসেরই এক পার্টিতে, জানিয়েছেন তিনি। নিজের মতো নাচছিলেন জ্যাকলিন। আর যথারীতি মহিলা পরিবেষ্টিত হয়ে নাচছিলেন প্রেসিডেন্ট। পাঁচ মিনিট নাচছেন নতুন তরুণীর সঙ্গে। আর তার পরই মিনিট কুড়ির জন্য তাকে নিয়ে হাওয়া লিফটে চেপে। ফিরে এসে আবার নতুন কোনও মেয়ে। এই রং বদলের খেলাই ছিল তাঁর কাছে জীবনের মানে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাকমিলানকে নিজেই জানিয়েছিলেন, নতুন নতুন সঙ্গিনী না থাকলে তাঁর আবার মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। সেক্রেটারি থেকে হোয়াইট হাউসের কর্মী, মায় মেরিলিন মনরো পর্যন্ত বর্ণময় এই প্রেসিডেন্টের রঙের ছটায় আবিষ্ট হয়েছিলেন সকলেই। সব কিছু দেখেও কী করে চোখ বুজে থাকো, অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন জ্যাকলিনকে। উত্তরে একটাই কথা বলতেন জ্যাকি “ও জানে, ও যা করছে তা ভুল। ও এটাও জানে, সেটা আমি জানি। তার জন্যই আমার কিচ্ছু যায় আসে না।” বিশ্বাসের এই সূক্ষ্ম সুতোই বোধ হয় বেঁধে রেখেছিল দুই পারের দু’জনকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.